নিজ সংবাদ ॥ পেঁয়াজ রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বহলবাড়িয়া গ্রামের চাষিদের। কিন্তু তাঁদের সেই দুশ্চিন্তা দূর করেছে পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘর। ওই গ্রামের কৃষক বিধান চন্দ্র মন্ডল এক প্রতিবেশীর সঙ্গে মিলে এ বছর মডেল ঘরে ২৫০ মণ পেঁয়াজ রেখেছেন। জানা যায়, দেশে বছরে মোট চাহিদার চেয়ে পাঁচ-ছয় লাখ টন বেশি উৎপাদন হচ্ছে পেঁয়াজ। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পণ্যটি আমদানি করতে হচ্ছে। দাম অস্বাভাবিক বাড়ার এটি একটি কারণ। পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় কৃষকদের লোকসান হচ্ছে আর ভোক্তারা চড়া দামে কিনছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সারা দেশে মডেল ঘর বানাচ্ছে সরকার। ২০২১ সালের জুলাই মাসে মডেল ঘর নির্মাণের প্রকল্প নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭টি জেলায় ইতিমধ্যে ৩০০ আধুনিক ঘর বানানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ৬০০ ঘর বানানো হবে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট গবেষণা করে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘরের নকশা বানায়। কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ দিয়ে বানানো এই ঘরে তিন স্তরের মাচা রয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পেছনে দেওয়া হয়েছে ছয়টি তাপনিয়ন্ত্রণ ফ্যান। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল। বহালবাড়িয়া গ্রামের জেলেপাড়ায় পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের মডেল ঘর গত মঙ্গলবার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। কর্মকর্তারা জানান, কুষ্টিয়ায় ১৫টি গ্রামে মডেল ঘর বানানো হয়েছে। কুমারখালী উপজেলার শান্তপুরিয়া গ্রামের কৃষক আলফাজ উদ্দিন বলেন, ঘরের মাচায় ৭০০-৮০০ মণ পেঁয়াজ রাখলে ওজন কমে ও পচে ৩৫-৪০ শতাংশ নষ্ট হতো। এখন পেঁয়াজ সংরক্ষণের চিন্তা দূর হয়েছে। সালথা উপজেলার গুরদীয়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘পেঁয়াজ রাখা নিয়া মাথা নষ্ট হয়ে যেত। একবার পচন ধরলে আর রক্ষা নেই। কিন্তু মডেল ঘর দুশ্চিন্তা দূর করেছে। তাপমাত্রা বাড়লে ফ্যান চালিয়ে দিই। একটি ঘরে ৫০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যাচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মাগুরার ১২ উপজেলায় ৩০০টি মডেল ঘরে সাড়ে চার হাজার টন পেঁয়াজ রাখা যায়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, কৃষক ও ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে মডেল ঘর বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে আমদানিনির্ভরতা কমবে এবং কৃষকেরাও লাভবান হবেন।