ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, দুইমাসে দেড় লাখ টাকা আয় - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, দুইমাসে দেড় লাখ টাকা আয়

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জুন ১৪, ২০২৩
ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, দুইমাসে দেড় লাখ টাকা আয়

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যুবক মো. শামিম হোসেন (৩২) প্রায় নয় বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে ২০২০ সালে গ্রামে ফিরেছেন। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে আর বিদেশ ওমানে যাওয়া হয়নি তাঁর। তাই গ্রামে থেকেই কিছু একটা করবেন বলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কি করবেন তার কোনো দিকঠিক পাচ্ছিলেন না তিনি।

ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, দুইমাসে দেড় লাখ টাকা আয়

ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, দুইমাসে দেড় লাখ টাকা আয়

ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, দুইমাসে দেড় লাখ টাকা আয়

অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশা কৃষিকাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করবেন। কিন্তু তিনি সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে চাননা। তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে লাভজনক চাষাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেজন্য তিনি চাষাবাদ শেখার জন্য ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে শুরু করেন।

একপর্যায়ে তাঁর স্মার্টফোনের স্কিনের ইউটিউবে হঠাৎ একদিন ভেসে উঠে যশোর এগ্রো -১ এর ইয়োলো ( হলুদ ) গোল্ড জাতের তরমুজ চাষের ভিডিও। ভিডিও দেখে তিনি খুব মুগ্ধ হন ও তরমুজ চাষের জন্য মনস্থির করেন।

google news

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

এরপর তিনি অনলাইনে ইয়োলো গোল্ড ও স্মার্টবয় (কালো জাতের) তরমুজের বীজ ক্রয় করেন এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগীতায় চাষাবাদ শুরু করেন। মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে তিনি হলুদ ও কালো জাতের তরমুজ চাষ করে দেড়মাসে এক লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করছেন। তিনি আগামী ১০ দিনের মধ্যে আরো ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রির প্রত্যাশা করছেন। আর এরজন্য তাঁর খরচ হয়েছে মাত্র ২২ হাজার ৬৯০ টাকা।

শামিম হোসেন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামের কৃষক মো. এলাহী মন্ডলের ছেলে। তিনি প্রথমবারের মতো হলুদ ও কালো জাতের তরমুজ চাষাবাদ করে এলাকায় ব্যাপক সারা ফেলেছেন। কম সময় ও খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অন্য কৃষকরাও এচাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে।

রোববার (১১ জুন) সকালে উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দুরে মিরপুর মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, মালচিং পদ্ধতি সারিসারিবদ্ধভাবে কৃষক শামিম গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষাবাদ করছেন। জালের ব্যাগে তাঁর জমির মাচাতে কালো ও হলুদ তরমুজ ঝুলছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন প্রায় দেড় থেকে সাড়ে ৪ কেজি।

ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, দুইমাসে দেড় লাখ টাকা আয়

ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, দুইমাসে দেড় লাখ টাকা আয়

এসময় কৃষক শামিম হোসেন বলেন, নয় বছর পর দেশে ফিরে করোনার কারনে আর বিদেশে যাওয়া হয়নি তাঁর। তাই তিনি আধুনিক ও লাভজনক চাষাবাদের সিদ্ধান্ত নেন। সেজন্য তিনি ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও দেখতেন। একদিন যশোর এগ্রো -১ এর তরমুজ চাষের ভিডিও দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন ও এচাষের সিদ্ধান্ত নেন। পরে অনলানের অর্ডার করে বীজ সংগ্রহ করেন এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতা ও পরামর্শে তিনি গত এপ্রিলে ২০ শতাংশ জমিতে হলুদ ও কালো জাতের তরমুজ মালচিং পদ্ধতি চাষ করেন।

শামিম হোসেন জানান, চারা রোপনের মাত্র ৩০ -৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করে এবং ৪০ -৪৫ দিনের মধ্যেই ফল পরিপক্ব হয়। প্রতিটি তরমজুের ওজন প্রায় দেড় থেকে সাড়ে ৪ কেজি। প্রতিকেজি তরমুজ তিনি ৭০ টাকা করে বিক্রি করেছেন।

তাঁর ভাষ্য, বীজ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্চা বাবদ ২০ শতাংশ জমিতে তাঁর প্রায় ২২ হাজার ৬৯০ টাকা খরচ হয়েছে। মাত্র দুইমাসে তিনি প্রায় ৯০০ পিচ তরমজু বিক্রি করে প্রায় এক লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তিনি আরো ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রির প্রত্যাশা করছেন। খরচ বাদে তাঁর প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে। আগামী বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে এ তরমুজের চাষ করবেন।

একই এলাকার কৃষক গোলাম মোস্তফা (৬০) বলেন, শামিম বিদেশ থেকে এসে মাঠে প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অল্প সময় ও খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকেই আগামীতে এচাষ করবেন।

আলমগীর হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, তরমুজ খুব মিষ্টি রসালো। অসময়ে হয় বলে কদরও বেশি। তিনি আগামী বছরে পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ করবেন।

এবিষয়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, এ তরমুজের বয়সকাল মাত্র ৬০ – ৭০ দিনের। কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় অনেকে কৃষকই আগ্রহ দেখাচ্ছে। তিনি কৃষক

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো প্রদর্শনী প্লটে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ করেছেন প্রবাস ফেরত যুবক। এচাষের ফলন ও দাম সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অন্য চাষীরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কৃষি অফিসের প্রণোদনা ও পরামর্শে আগামী বছরে ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে কৃষকরা এ তরমুজের চাষাবাদ করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।

আরও পড়ুন: