প্রবাস থেকে ফিরেই স্বজনদের লাশ দেখতে হলো
বিদেশ থেকে স্ত্রীর অসুস্থতার খবরে ছুটে এসেছিলেন কুয়েতপ্রবাসী সোহানুর রহমান। কিন্তু বাড়ি ফিরে তাকে দেখতে হলো মর্মান্তিক এক দৃশ্য—নিথর পড়ে আছে তার বাবা-মা ও নিকট স্বজনদের মরদেহ।
গতকাল বুধবার সকালে নাটোরের বড়াইগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের আটজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে চারজনকে পাশাপাশি সমাহিত করা হয়। বাকিদের দাফন সম্পন্ন হয় পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পৃথক স্থানে।
বুধবার ভোরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ গ্রামের একটি পরিবার মাইক্রোবাসযোগে সিরাজগঞ্জে যাচ্ছিল প্রবাসী সোহানুর রহমানের অসুস্থ স্ত্রী সাফিয়া বেগমকে দেখতে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আইড়মারী এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিমেন্টবাহী ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
ঘটনাস্থলেই পাঁচজন প্রাণ হারান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
এই দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন—
জাহিদুল ইসলাম (৬৬)
তাঁর স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৫৫)
শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন ওরফে আন্না (৫৫)
মিজানুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৫৫)
মাইক্রোবাসচালক সাহাব উদ্দীন (৪২)
রফেজ চৌধুরীর স্ত্রী ইতি আরা খাতুন (৪৫)
মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা (৭০)
শুকুর আলীর স্ত্রী শিমা খাতুন (৪০)
তাদের মধ্যে জাহিদুল, শহিদুল ও মিজানুর চাচাতো ভাই। আর আঞ্জুমান, শিমা ও ইতি আরা—জাহিদুলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
দুর্ঘটনায় বাবা-মা ও আত্মীয়দের মৃত্যুর খবর শুনে জাহিদুল ইসলামের ছেলে সোহানুর রহমান এবং আনোয়ারা খাতুনের ছেলে সুইট বুধবার রাতেই কুয়েত থেকে রওনা দেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তারা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শোকের মাতমে ভরে ওঠে পুরো এলাকা। স্বজনদের নিথর দেহ দেখে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী নিহতদের পরিবারের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন। এ সময় নিহত মাইক্রোবাসচালক সাহাব উদ্দীনের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
নিহত আনোয়ারা খাতুনের স্বামী শহিদুল ইসলাম আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বুধবার রাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা।
