কুমারখালীতে পূর্বশত্রুতার জেরে গোয়ালঘরে আগুন - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুমারখালীতে পূর্বশত্রুতার জেরে গোয়ালঘরে আগুন

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ ‘ওহ আল্লাহ! কার এতো বড় ক্ষতি করিছি। কিডাই আমার এমন সর্বনাশ করল। কিডাই ঘরে আগুন দিল। ওরে আমার গরুও গেল, ব্যাটাও পুড়ল।’ গতকাল সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে বিলাপ করে এসব কথা বলছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মরিয়ম খাতুন। গত রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৯টার দিকে তার দুই ছেলে মনিরুল ইসলাম (৪০) ও জনিরুল ইসলামের (৩৪) গোয়ালঘরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তারা প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালান। অগ্নিকাণ্ডে তাদের প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যের একটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী গরু পুড়ে মারা গেছে। প্রায় সাড় তিন লাখ টাকা মূল্যের আরও দুইটি একই জাতের গাভী গরুর শরীর ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় গরুর জীবন বাঁচাতে গিয়ে আমিরুলের শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে যায়।

বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা গোয়ালঘরে আগুন লাগিয়েছে। এর ১৫ দিন আগে ঘরের টিনের বেড়া কেটে জামিরুলের ঘরে নগদ টাকা ৬০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ঘটে। এর আগে প্রায় দুই মাস আগে একটি গরুকে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেরেছে দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে থানায় মামলা করবেন বলে জানান তারা। মরিয়ম জানান, রাতে কে বা কারা পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছে। গরু বাঁচাতে গিয়ে তার বড় ছেলে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিল। এতে তার শরীর আগুনে ঝলসে গেছে। তিনি দোষীদের শাস্তি চান। শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শাহ আলম বলেন, রাত ৯টার দিকে আকস্মিকভাবে দাউ দাউ করে আগুন দেখে ছুটে আসে সবাই। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও আসে।

প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুড়ে মারা যায় একটি গরু। আরো দুইটি গরুর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এতে প্রায় পাঁচ-ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনিরুল। গতকাল দুুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দুর্গাপুর-মির্জাপুর সড়কের ধারে হকার মনিরুল ও জনিরুলের গোয়ালঘরসহ বসতি। গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভেতরে একটি মৃত গাভী ও একটি দগ্ধ গাভী রয়েছে। পাশের আরেকটি গোয়ালঘরে রাখা রয়েছে আরও একটি দগ্ধ গাভী। জনিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে গরুগুলো পালন করছি দুই ভাই। এই গরুগুলো আমাদের সম্পদ ছিল। তাও পুড়ে গেল। আবার ভাইয়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এখন কি করব ভেবে কুল পাচ্ছিনা। মারা যাওয়া গাভীটি প্রতিদিন ১২ লিটার করে দুধ দিত বলে তিনি জানান।

আহত মনিরুলের স্ত্রী পারভীন খাতুন বলেন, স্বামী প্লাস্টিকের মালামাল বিক্রি করে। আর আমি গাভী পালন করতাম বাড়িতে। এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসারে সম্পদ বলতে এতটুকুই। এখন আমার সব শেষ। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করব। কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব অফিসার ফিরোজ আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগীতায় প্রায় ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি ক্ষতিয়ে দেখে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক শামীমা আক্তার বলেন, মনিরুলের শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ আগুনে ঝলসে গেছে। উন্নত চিকিৎকার জন্য কুষ্টিয়া রেফার্ড করা হয়েছে। তার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাচ্ছেনা। কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।