নিজ সংবাদ ॥ আগে জীবনে কোনদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও জয়বাংলা শ্লোগান না দিয়েও রাতারাতি বনে গেছেন বড় নেতা। এক নেতার গাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে ও দরজা খুলে দিয়ে মন জয় করে পেয়ে গেছেন পদ-পদবি। এক সময় বিএনপি মনা রাজনীতি করলেও এখন সে হাইব্রীড নেতা। তার দাপটে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মিরা কোনঠাসা। এই নেতার নাম জহুরুল ইসলাম। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। পাশাপাশি জেলা পরিষদের মেম্বার। ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি টাকা পয়সারও মালিক হয়ে গেছেন। সদরের রাজনীতিতে এখন জহুরুল এক প্রভাবশালী নেতার নাম। আতাউর রহমান আতার ডান হাত হওয়ার কারনে সবাই এ হাইব্রীড নেতাকে সালাম দিয়ে চলে।

নেতা-কর্মিদের অভিযোগ, জীবনে কোন দিন ছাত্রলীগ-যুবলীগের রাজনীতি না করলেও শুধুমাত্র নেতার গাড়িতে ঘুরে ও চামচামি করে পদ-পদবি পেয়ে গেছেন । এক লাফে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক পদ পেয়ে যান। পাশাপাশি প্রভাব বিস্তার করে অর্থ ও পেশীশক্তি ব্যবহার করে জেলা পরিষদের মেম্বার পদে জয়ী হন। তবে সেই নির্বাচনে ফল জালিয়াতির অভিযোগ আনেন পরাজিত প্রার্থী। জহরুলের বাড়ির পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নে। কুষ্টিয়া শহরে আসেন এক যুগ আগে। এক কোচিং সেন্টারে চাকুরি শুরু করেন। এরপর শহর আওয়ামী লীগের এক নেতার কাছিকাছি ভেড়ার চেষ্টা করেন। পরে সেই নেতার গাড়িতে ঘুরতে থাকেন। নেতা গাড়িতে ওঠার আগে দরজা খূলে দিতেন, আবার নামার আগে দরজা খুলে দিতেন। এসব কারনে নেতার আস্থাভাজন হয়ে যান। এরপর ধীরে ধীরে নেতার কাছাকাছি ভীড়ে যান। এরপর সর্বশেষ কাউন্সিলের পর জহুরুল দলে পদ পেয়ে যান। এরপর জহুরুল বেপোরয়া হয়ে ওঠে। নেতা-কর্মিরা বলেন, সদরের রাজনীতিতে আতার কথায় শেষ কথা। আতার বাইরে সদরে কোন কাজ হয় না রাজনীতির মাঠে। টেন্ডার, হাট-ঘাট, নিয়োগসহ সব তার নিয়ন্ত্রণে। এই আতার হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিকেলে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন জহুরুল। জহরুল তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে দীর্ঘদিন এ অপকর্ম করে আসছেন। কোটি কোটি টাকা কমিশন নিয়ে তারা এ কাজ করে আসছে। এর আগে সদরে হাট-ঘাট নিয়ন্ত্রণ করেন জহরুল। সে সময় টাকার ব্যাগ হাতে দেখা যায় তাকে। জহুরুল ক্যাডার বাহিনীতে মাদক সেবনকারী থেকে অস্ত্রধারীরা আছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার এক শীর্ষ নেতার সাথে বিভিন্ন আসরে বসার অভিযোগ রয়েছে। সেই সব আসরে বসে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডর মত অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। জেলা পরিষদের মেম্বার হয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে তার শালীর চাকুরিও বাগিয়ে নিয়েছেন। ত্যাগী নেতা-কর্মিদের অভিযোগ, হঠাৎ নেতা বনে যাওয়া জহুরুলের দাপটে দলের লোকজন অসহায়। তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাদের ওপর খবরদারি করেন। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। গত সংসদ নির্বাচনেও জহুরুল তার এলাকায় ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন। সদর উপজেলা নির্বাচন ঘীরেও সে আবার তৎপর হয়ে উঠেছে। আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে কোন শক্ত প্রার্থী না থাকায় ভোটারদের মধ্যে তেমন কোন উৎসাহ নেই। নির্বাচনের দিন ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম হওয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছে আতাউর রহমান আতা। তাই ভোটার উপস্থিতি ও ভোটের হার বেশি দেখাতে আগেভাগেই কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়ে বাক্স ভরার মত ষড়যন্ত্র চলছে। গত সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনকে ও কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জাল ভোট দেওয়ার মত অভিযোগ করেন পারভেজ আনোয়ার তনু। এবারো সেই একই কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছে জহুরুল। এ নিয়ে কয়েকদিন আগে এক সভায় জ্বালাময়ি বক্তব্য রাখেন জহরুল। অনেক নেতা সেই সভায় বলেন, সংসদ নির্বাচনের থেকে বেশি ভোট আমরা দেওয়ার চেষ্টা করব। ভোটার না আসলেওস যে ভাবেই হোক ভোট বাড়ানো হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা বলেন, জহরুল সব বিষয় সমন্বয় করছে। নির্বাচনের দিন কিভাবে কি করতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে গরমের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি হবে না বুঝতে পেরে তারা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতাদের আগের রাতে বিশেষ নির্দেশনা দিতে পারে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। এদিকে প্রশাসন থেকে কড়া হুশিয়ারি দিলেও জহরুল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। টাকা পয়সা ছিটিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে তারা। মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আহাদ আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, জহরুল তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। মাঠে নামলে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আমাকে মারার ভয় দেখানো হচ্ছে। ভোটার দিন সব কেন্দ্র দখল করে তারা ভোট কেনে নেবে বলেও আমার কাছে খবর আছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন সুষ্ঠু ভোটের আয়োজন করে। এ সব বিষয়ে কথা বলতে জহুরলের মোবাইল নম্বর রিং দিলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
