ভেড়ামারায় রহস্যময় এক বটগাছের পাতা ছিড়লেই বিপদ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ভেড়ামারায় রহস্যময় এক বটগাছের পাতা ছিড়লেই বিপদ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ভয়ংকর জায়গা ব্যাকাপুলের কাছে অবস্থিত প্রাচীন বটগাছ। শতবর্ষী এ গাছটি দাঁড়িয়ে আছে উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় নামক গ্রামের সজনিতলায়। ভয়ংকর জায়গা সজনিতলা বটগাছ। এই গাছে আগে বসবাস করতো ভূত-পেত্নী। এমনকি গাছের পাতা ছিড়লেই হতো জ্বর।

ভেড়ামারায় রহস্যময় এক বটগাছের পাতা ছিড়লেই বিপদ

গাছ থেকে রাতে ভেসে আসতো বিভিন্ন ধরনের শব্দ। অনেকেই বলতো জ্বীন-পরীদের বিয়ে হচ্ছে। তাই ভয়ে কেউ বটতলায় যেতো না। দিনের বেলায় কেউ সাহস করে গেলেও ভয়ে তার গা ছমছম করতো। বটগাছটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসে লোকজন। এই পুরোনো বটগাছটি ঝড় তুফানে ক্ষতি করতে পারেনি। এখন বটতলা সন্ধ্যা নামলে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। জানা যায়, উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামেই রয়েছে বহু পুরোনো বটগাছ। বিশাল আকারের এই গাছটির বিশালতা দেখার মতো। বটগাছের বেশ কয়টি কান্ড মাটি ছুঁয়ে রয়েছে। গাছের নিচে অন্য কোনো গাছ বা আগাছা এখন তেমন নেই। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয় সজনিতলা বটগাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে বটগাছ ঘিরে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যস্থান। বটগাছটি নিচে দোয়া, প্রার্থনা ও মানত করেন। কেউ বলতে পারে না বটগাছটি জন্মের কথা। এলাকার প্রবীণরা জানান, প্রথমে এই বট গাছের পাতা ছিড়লেই নাকি শরীরের জ্বর হতো। এই বটগাছটি নিয়ে অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। যা পূর্বপুরুষদের মুখে মুখে শুনে আসছেন। যুগে যুগে কি রহস্যময় জিনিস দেখে আসছে মানুষ। তবে পুরোনো জিনিস যা ঐতিহ্য বহন করে। আর ঐতিহ্যের অংশই হচ্ছে এই বটগাছ। রাতের বেলার কথা বাদই দিলাম। দিনের বেলায় সেখানে যেতে ভয়ে গা ছমছম করতো। বটগাছ তলা ছিলো জঙ্গলে ভরা চরম অন্ধকার থাকতো জায়গাটি। ভূত-পেত্নীর আড্ডা ছিল। সেই কারণে সব সময় অনেকেই এই বটগাছ দেখে ভয় পেত। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম ভয়ংকর এই সজনিতলা বটগাছের কাছ দিয়ে ভয়ে কেউ চলাফেরা করতে পারতো না। রায়টা-জুনিয়াদহ যাওয়ার জন্য মানুষ ট্রেনে চরে যেতো। হাঁটার কাঁচা রাস্তাটি ছিল ভয়ংকর। ভেড়ামারা-রায়টা, গোলাপনগর ও জুনিয়াদহর মানুষ কেউ হেঁটে ভূত-পেত্নীর ভয়ে কেউ চলাচল করতে পারতো না। এখন পাঁকা রাস্তায় পরিণত হলেও চলাচল করতে ভয় পায় পথচারীরা। কারণ আগে ছিল ভূতের ভয়। এখন হচ্ছে সন্ত্রাসীদের ভয়। রাত নামলেই বটতলায় সন্ত্রাসীদের আড্ডা। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত সজনিতলা বটগাছ নিয়ে রয়েছে নানা কথা। নওদা ক্ষেমিরদিয়ার গ্রামের শাহাদত হোসেন বলেন, আগে যেসব মেয়ে মানুষের ছেলে সন্তান হতো না। তারা এই সজনিতলা বটগাছের গোড়ায় শিকড়ে অনেকেই মানত করে দুধ ঢালতে দেখেছি। হিন্দুরা এসে পূজা করত। নতুন হাট গ্রামের জমির উদ্দীন জানান, আগের দিনে এই বটগাছে রাতে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শোনা যেতো। অনেকেই বলতো জ্বীন-পরীদের বিয়ে হচ্ছে। তাই ভয়ে কেউ বটতলায় যেতো না। দিনের বেলায় কেউ সাহস করে গেলেও ভয়ে তার গা ছমছম করতো। চক ভেড়ামারা গ্রামের খোদা বক্কর ও দবির আলী জানান, আগের দিনে সজনিতলা বটগাছের কাছে যেতে ভূত-পেত্নীদের ভয় কোনো লোক সেখানে যেতো না। এখন এই বটগাছের নিচে রাতে সন্ত্রাসীদের বসবাস। ভেড়ামারা মানুষের কাছে এখন বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বটগাছটি। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়। দামুকদিয়া গ্রামের দাদুভাই নামে খ্যাত আলাউদ্দীন বলেন, আমি গ্রামের বাড়ি গেলেই সব মামাতো-খালাতো-চাচাতো ভাইবোনেরা একসঙ্গে হইচই করি। গল্প করি। অবধারিতভাবেই তাতে উঠে আসে ভূতের গল্প। শোনা যায়, বট গাছের নিচে নাকি ভূত থাকে। তখন সজনিতলা বটগাছের কথা মনে করে দেয়। এই বটগাছ কে ঘিরে অনেক ঘটনার জন্ম। রাতে বটগাছের কাছে যাওয়া ছিল অনেক কঠিন। সেই সময় ডাকাত দল এই গাছের নিচে গিয়ে বসে বা শুয়ে থাকতো। একদিন নবীর উদ্দীন নামে ডাকাত বটগাছের কাছে যেতেই ভূত এসে চেপে ধরে। এরপর বেহুস হয়ে পড়ে ছিলেন তিনি। পরে ১০ গ্রামের মানুষ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। কী ভয়ংকর ঘটনা! তিনি বলেন, আসলে কি বট গাছের নিচে ভূত থাকে? পুরো ঘটনাটি নিতান্ত প্রাকৃতিক। গাছ ঠিক আমাদের মতোই শ্বাস নেয় ও ফেলে। আমরা জানি, মানুষ রাত হোক বা দিন, প্রশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেয় অক্সিজেন। আর নিশ্বাসের সঙ্গে ছেড়ে দেয় কার্বন ডাই-অক্সাইড। গাছেদের জন্য বিষয়টা ঠিক এরকম না। একটু ভিন্ন। দিনে গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নেয় বেশি করে। আর নিশ্বাসের সঙ্গে ছাড়ে অক্সিজেন। ভেড়ামারা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা জানান, ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গাছের এই কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রয়োজন পড়ে। এটা ব্যবহার করে গাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তথা শক্তি তৈরি করে। তবে রাতের বেলা সালোকসংশ্লেষণ ঘটে না। এ সময় গাছের স্বাভাবিক শ্বসন চলতে থাকে। তাতে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দেয় বটগাছ বা বড় গাছ। তিনি আরো বলেন, কেউ যদি রাতের বেলা এরকম বড় গাছের নিচে বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নেয়, এই প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যায় তার শ্বাসনালীতে। ফলে নিশ্বাস আটকে আসে। শরীরে দেখা দেয় অক্সিজেনের ঘাটতি। বিজ্ঞান না জানার কারণে এটিই মুখে মুখে বদলে গেছে। হয়ে উঠেছে বট গাছের অদৃশ্য ভূত। স্থানীয়দের কাছে সজনিতলা বটগাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। কেউ বলেন, এর বয়স একশ বছরেরও বেশি। কেউ বলেন দেড়শ। তবে যত মতভিন্নতা থাকুক, গাছটি শতবর্ষী। বিশালাকার জায়গার ওপর এই বটগাছ। গাছটির পরিচয় শতবর্ষী সজনিতলা বটগাছ। মানুষের প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রেম ও সংলাপের মাধ্যমে সজনিতলা নামক এই প্রাচীন বটগাছটি অনেকরই আকর্ষণ সৃষ্টি করে।