কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে মশারি ছাড়াই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা
হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় নির্ধারিত শয্যা ২০টি। কিন্তু ভর্তি আছে ৪৪ জন। শয্যা সংকটের কারণে ২৪ জন চিকিৎসা নিচ্ছে মেঝেতে। তবে বেশিরভাগ রোগীকে মশারি ছাড়াই থাকতে দেখা গেছে। দুয়েকজনের মশারি টানানো থাকলেও তারা বাইরে বিছানায় বসে ছিলেন। মশারি না টানানোর কারণ হিসেবে গরমের অজুহাত দেন।

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে মশারি ছাড়াই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের চিত্র এটি। ডেঙ্গু রোগীরা শুধু রাতের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমায় বলে জানায় অন্য রোগীরা। মশারি না টানানোর বিষয়ে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্সের কাছে জানতে চাইলে তিনি তড়িঘড়ি মশারি টানিয়ে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নার্স বলেন, ‘বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও রোগীরা মশারি টানানোর বিষয়ে উদাসীন। তারা নানা অজুহাতে মশারি টানাতে চায় না।’
কুষ্টিয়ায় বাড়ছে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগাক্রান্তদের সংখ্যা। সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৪৪ জন। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ভর্তি হয়েছে ১৫ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বর্ষা নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। সে গত ৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তার বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায়। এর আগে গত ২৯ আগস্ট আছিয়া খাতুন নামে আরেক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। হাসপাতালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু এলাকার রোগীর সংখ্যা বেশি।
সদর উপজেলার হরিণারাপুর থেকে আসা ডেঙ্গু রোগী মো. হাসান বলেন, ‘ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। হঠাৎ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা করে জানতে পারি ডেঙ্গু হয়েছে।’
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় গত ১ জানুয়ারি থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।
জেলার দৌলতপুর উপজেলা ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কুষ্টিয়া ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও রাজবাড়ী জেলার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। ফলে চাপ আরও বাড়ছে। অথচ রোগীদের চিকিৎসায় টানানো হচ্ছে না মশারি। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অন্যান্য ওয়ার্ডের রোগী ও স্বজনরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আলী হোসেন নামে এক রোগী বলেন, ‘জরুরি বিভাগের পাশেই ডেঙ্গু ওয়ার্ড। এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের মশারি না টানানোর ফলে আমাদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে আবার আরেক রোগে (ডেঙ্গু) আক্রান্ত না হয়ে পড়ি।’
সৌরভ হোসেন নামে রোগীর এক স্বজন বলেন, ‘আমার চাচা হার্টের রোগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীদের মশারি না টানানোর ফলে অন্যদের ঝুঁকি বাড়ছে। আমরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে আছি।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘প্রতিদিন ১৪-১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। কুষ্টিয়া ছাড়া আশপাশের জেলা থেকেও রোগীরা আসছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ২০ শয্যা থাকলেও প্রয়োজন বিবেচনায় বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ভর্তি রোগীদের সকলকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।’ মশারি না টানিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রোগীদের উদাসীনতাকে দায়ী করেন।
সিভিল সার্জন এএইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। তবে ডেঙ্গু হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসার সময় অবশ্যই মশারি টানাতে হবে। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করতে হবে।’
স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য পরিতোষ কুমার দাস বলেন, ‘শহরকে পরিচ্ছন্ন ও মশামুক্ত করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে পৌরসভার যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায় আছে। কর্তৃপক্ষের দিকে না তাকিয়ে পাড়া-মহল্লার সবাইকে দল বেঁধে নেমে পড়তে হবে।’
শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা হাফিজ-আল আসাদ বলেন, ‘সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িতে শিশু ও বৃদ্ধ মা রয়েছে। সবসময় তো মশারি টানিয়ে থাকা যায় না। মশা নিধনে পৌর কর্তৃপক্ষের তেমন তৎপরতা নেই।’
এদিকে কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এডিস মশা নির্মূলে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিদিন নিয়ম করে মশা নিধনে স্প্রে করছেন।
