ভেড়ামারায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ্য পান চাষীদের জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ভেড়ামারায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ্য পান চাষীদের জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: মার্চ ২১, ২০২৪

নিজ সংবাদ ॥ জীবন যুদ্ধে আবারও দাঁড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের কৃষকদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ এখনো কাটেনি। আগুনের লেলিহান শিখায় চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে স্বপ্ন। এমন অসহায় অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর পথ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। পোড়া ক্ষত থেকেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। মাটিতে পোড়া গন্ধ না শুকালেও জমি থেকে পুড়ে যাওয়া বাঁশ,পাটকাঠি আর ধংসস্তুপ সরিয়ে নিয়ে নতুন করে পান বরজ তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক। অনেকেই পান বীজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় প্রয়োজনপ্রচুর টাকার। কিন্তু টাকার কোন ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ৪% হারে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করে দেবেন, এমন ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। দ্রুত অথ্রের ব্যবস্থা হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তারা। ঘুরে দাঁড়াবে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া অর্থনীতি। গত ১০ মার্চ সকাল ১১টার দিকে রায়টা পাথরঘাট এলাকা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তেই আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের সহস্রাধিক হেক্টর জমির পান বরজ,ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় গ্রামবাসীর নিরন্তন প্রচেষ্টায় সাড়ে ৫ ঘন্টার প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। নজিরবিহীন ক্ষতির কবলে পড়ে হাজারো কৃষক। টাকার ব্যাংক খ্যাত পানবরজ চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে কৃষকরা। আগুনের কাছে এক অসহায় আত্মসমর্পনে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো এলাকার মানুষ। পানবরজ পোড়ার সাথে সাথে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে এলাকাটি। পানবরজের সাথে সম্পর্কিত কৃষি শ্রমিকরা মুহুর্তেই বেকার হয়ে গেছে। কৃষকের পানকে ঘিরে গড়ে ওঠা কুচিয়ামোড়া পান হাটও এখন পান শূন্য। গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষকই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছেন। নতুন করে পান বরজ প্রস্তুত করতে পোড়া বাঁশ ও খুঁটি সরিয়ে নিচ্ছেন। বাঁশ ও খড় দিয়ে ছাউনি দিচ্ছেন। পানের বরজই যে তাঁদের প্রধান অর্থকারী ফসল। এতেই তাদের সংসার চলে। যে কোন ভাবেই পানবরজ প্রস্তুত করতেই হবে। রায়টা এলাকার কৃষক রুহুল আমীন জানান, আমার ১ বিঘা জমিতে পান বরজ ছিল। খুব কষ্ট করে করেছিলাম। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন নতুন করে করতে হলে অনেক টাকা প্রয়োজন। আমাদের এ অবস্থায় এনজিও গুলো ঋণ দিতেও নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে। মেঘনাপাড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক শাহাজাহান আলী। ১৩০ পিলি পানের বরজ ছিল তার। আগুনে সব কিছুই শ্যাষ হয়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া পান বরজেই নতুন বীজ লাগানোর জন্য ড্রেন করছেন। তিনি জানান, আমার মত বহু কৃষকই এখন নতুন করে পান বরজ তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ জন্যপ্রয়োজন হচ্ছে বাঁশ, পাটকাঠি, সুতা, তার, বাতা, খড়। সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। যে পাটকাটি ১ মণ কিনতাম ৩৩০ টাকা দিয়ে। এখন সেই পাটকাঠি কিনতে হচ্ছে ৫’শ থেকে সাড়ে ৫’শ টাকায়। এছাড়াও শ্রমিক সহ নানা কাজেইপ্রয়োজনপ্রচুর টাকা। তিনি জানান, ১৩০ পিলি পান বরজ নতুন করে করতে হলেপ্রয়োজন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। পুড়ে যাওয়া পানবরজের বাঁশ,বাতা বাছাই করে ব্যবহার করবো,তাতেও খরচ হবে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা। কিন্তু আমাদের কাছে তো টাকা নেই। এমন অবস্থায় সরকারী সহযোগিতায় দ্রুত ঋণের ব্যবস্থা হলে,আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কাজটা সহজ হতো। একই অবস্থা মেঘনাপাড়া এলাকার লতিফ, শরিফুল, সাজুল, শফি, মহিউদ্দীন এবং রায়টার জালাল উদ্দীনসহ বেশিরভাগ কৃষকের। ১৪ মার্চ সকালে আগুনে পোড়া এলাকা পরিদর্শনে আসেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা। সাথে ছিলেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু। এসময় কৃষকরা আকুতি জানিয়ে জেলা প্রশাসককে জানান, তারা কোন ত্রান সহায়তা চান না। চান না চাউল। এ সহায়তার মাধ্যমে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তারা চান বিনা সুদে ঋণ। ১ বিঘা পানের জমি প্রস্তুত করতে জমির খাজনা সহপ্রায় ১ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এমন অবস্থায় সব ধরনের সহাযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলাপ্রশাসক এহেতেশাম রেজা। এছাড়াও ১৬ মার্চ নগদ অর্থ এবং খাদ্য সহায়তা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের দৌড়গোড়ায় পৌছান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন।