কুমারখালীতে সুদে টাকার জেরে বৃদ্ধকে হত্যার অভিযোগ
কুমারখালীতে সুদে টাকার জেরে বৃদ্ধকে হত্যার অভিযোগ। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মো. সিরাজুল ইসলাম (৫০) নামে এক বৃদ্ধের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া গ্রামের কারিগরপাড়ার নিজবাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। তিনি পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি ছিলেন।

কুমারখালীতে সুদে টাকার জেরে বৃদ্ধকে হত্যার অভিযোগ
তবে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, সুদে টাকা না পেয়ে পশ্চিম কয়া গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে বিপুল হোসেন ও পিকলু হোসেন সিজারের বসতভিটা দখল করে রোববার সকালে ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। নির্মাণ কাজে বাঁধা দেওয়ায় সকালে তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে সুদে ব্যবসায়ীরা। তাঁদের ভাষ্য, ঘটনার সময় বাড়িতে সিরাজু ছাড়া আর কেউ ছিলোনা। তাঁরা থানায় মামলা করবেন।
বেলা দেড়টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্বজন ও উৎসুক এলাকাবসী ভিড় করেছেন। মরদেহটির সুরতহাল করছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির বসতঘরটির পাশের ছোট ঘরটি ভাঙা হয়েছে। সেখানে নতুন ঘর করার জন্য সিমেন্টের খুঁটি পুতা রয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম।
এসময় নিহত ব্যক্তির মেয়ে লাবনী খাতুন বলেন, আমার বাবা সাদা কাগজে সাক্ষর করে বিপুল ও পিকলুর কাছ থেকে সুদে করে দুই বছরের জন্য এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। তবে মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই সুদে ব্যবসায়ীরা টাকা পরিশোধের চাপ সৃষ্টি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত শনিবার বিকেলে বিপুল ও পিকলু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ছোট ঘরটি ভেঙে দেয়। আর রবিবার সকালে নতুন ঘরের খুঁটি পুতা শুরু করে। সেসময় আমার বাবা বাঁধা দিলে তাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে গেছে সুদে ব্যবসায়ীরা।
তাঁর ভাষ্য, বাড়িতে শুধু তাঁর মা আর বাবা থাকেন। ঘটনার সময় তাঁর মা আত্মীয় বাড়িতে ছিলেন।
নিহত ব্যক্তির ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাড়ি একটু দুরে। সুদে টাকা দিতে না পারায় শনিবার বিকেল থেকেই তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে ভাংচুর চলছিল। রবিবার সকালে জমি দখলের কাজ শুরু হয়। জমি দখলে বাঁধা দেওয়ায় তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা থানায় মামলা করবেন।

স্থানীয়রা জানান, বিপুল হোসেন ও পিকলু হোসেন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সুদে ব্যবসা পরিচালিত করে আসছে। সুদের টাকার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন মানুষের জমি দখল ও মারধর করে আসছে। সম্প্রতি কয়া গ্রামের মৃত লিটনের স্ত্রী ভানু খাতুনের বসতবাড়ির জমি জোরপূর্বক বায়নানামা করে লোহার তারকাটা দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে ভানু খাতুন জানান, তাঁর ছেলে নয়ন পিকলুর কাছ থেকে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে সুদে করে দুই বছর আগে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল। সেই টাকা সুদে আসলে এখন তিন লাখ টাকা হয়েছে। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় প্রায় চার মাস আগে তাঁর ছেলেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বায়নানামায় সাক্ষর করে নিয়েছে এবং তাঁর বসতভিটা লোহার তার দিয়ে বেড়া দিয়ে রেখেছে। তাঁদের উচ্ছেদের জন্য নিয়মিত ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন সুদে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে এঘটনার পর থেকেই গাঁ ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত বিপুল হোসেন। তাঁর ফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত পিকলু হোসেন ফোনে বলেন, তাঁরা কোনো সুদে ব্যবসা করে না। বায়নানামা করে জমি কিনে ঘর করতেছিল। তাঁরা কাউকে হত্যা করেনি। তাঁর ভাষ্য, তাঁর ভাই বিপুল একটি এনজিওর ব্যবসা পরিচালনা করেন।

থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে একজনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে।
