কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে নৌকা ছেড়ে ট্রাকে আ.লীগ নেতারা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে নৌকা ছেড়ে ট্রাকে আ.লীগ নেতারা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
নির্বাচনের মাঠে কোনঠাসা সেলিম আলতাফ জর্জ

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি আব্দুর রউফ। এবার তার ট্রাক মার্কার পক্ষে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী। তাদের সঙ্গে নৌকা ছেড়ে ট্রাকে উঠেছেন সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীও।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে নৌকা ছেড়ে ট্রাকে আ.লীগ নেতারা

নির্বাচনের মাঠে কোনঠাসা সেলিম আলতাফ জর্জ

নির্বাচনের মাঠে কোনঠাসা সেলিম আলতাফ জর্জ

এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে জর্জ নিজে তা মনে করছেন না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোড় খাওয়া নেতাদের চমকে দিয়ে এ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট বাগিয়ে এমপি হন জর্জ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মুখ হলেও তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম কিবরিয়ার নাতি। সেই সুবাদে তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন বলে স্থানীয় নেতাদের ধারণা।

তবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং একলা চলো নীতির ফলে কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি। গত নির্বাচনে তিনি যেনতেনভাবে পার পেলেও এবার বেঁকে বসেছেন বেশিরভাগ দলীয় নেতা। গত বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুর রউফের সমর্থনে কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর এলাকার সততা রেস্টুরেন্টে কয়েক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। পরে আব্দুর রউফের নির্বাচনী প্রচার পরিচালনার লক্ষ্যে দুই উপজেলার জন্য আলাদা কমিটিও করা হয়। কুমারখালী উপজেলা কমিটির সভাপতি হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক প্রবীণ রাজনীতিক জাহিদ হোসেন জাফর এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান।

খোকসা উপজেলা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরমেয়র তারিকুল হককে এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা রহিম খান। আব্দুল মান্নান খান বলেন, জর্জ এমপি হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীরা চাপে আছে। দলের কর্মীদের নামে বহু হামলা-মামলা হয়েছে। তার পরিবারের কাছে জিম্মি উপজেলার মানুষ। এ দশা থেকে সবাই মুক্তি চান। তা ছাড়া এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের বিধিনিষেধ নেই। এ কারণে তারা একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আব্দুর রউফকে সমর্থন দিচ্ছেন। একই সুর জাহিদ হোসেন জাফরের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, সেলিম আলতাফ জর্জ বাদে অন্য যেকোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান বলেন, যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা না রেখে নিজেদের উন্নয়ন করেছেন, দলকে সংগঠিত না করে বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন, তারা কোনোভাবেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। তবে এসব অভিযোগকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না সাংসদ সেলিম আলতাফ জর্জ। তিনি বলেন, যারা দল করছেন তাদের অনেকের মনেই সাংসদ হওয়ার বাসনা রয়েছে। এই কারণে রাজনীতিতে গ্রুপ থাকবে, প্রতিপক্ষ থাকবে, আবার তারা নানা অভিযোগও করবে। আসলে এসবের কোনো গুরুত্ব নেই। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার। তিনি বলেন, ‘গুটিকয়েক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করছেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে কোনো প্রভাব পড়বে না।

উল্লেখ্য, কুমারখালী ও খোকসা দুইটি উপজেলা নিয়ে কুষ্টিয়া-৪ (সংসদীয় আসন-৭৮) আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৫ জন। যার মধ্যে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৩ জন পুরুষ, ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬০ জন মহিলা এবং ২ জন হিজড়া ভোটার। কুমারখালী উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নের ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৪২ জন ভোটারের জন্য ৯৮টি ভোট কেন্দ্রের ৬৪৩টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহন করা হবে এবং খোকসা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ জন ভোটারের জন্য ৫০টি ভোট কেন্দ্রের ২৭৭টি কক্ষে ভোট গ্রহন করা হবে। তবে এই আসনের ২টি উপজেলায় ঠিক কতগুলি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করেনি জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ।