দৌলতপুরে আতঙ্কে পদ্মাপাড়ের লক্ষাধিক মানুষ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

দৌলতপুরে আতঙ্কে পদ্মাপাড়ের লক্ষাধিক মানুষ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: আগস্ট ২৮, ২০২৪

দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ ফারাক্কা ব্যারাজের সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ অঞ্চলেও বন্যার আশঙ্কা করছেন উপজেলার চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। যদিও গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি দেখা যায়নি। ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত জুলাই মাসে কয়েক দফা পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়।

এর ফলে চরের বেশ কিছু আবাদি জমিসহ প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। আগস্টের মাঝামাঝিতে পানি কিছুটা কমতে শুরু করে। তবে হঠাৎ করে ভারত ফারাক্কা ব্যারাজ খুলে দেয়ার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পদ্মার তীরবর্তী বাসিন্দারা। এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। চরাঞ্চলে বন্যার ঝুঁকিতে থাকা চার ইউনিয়নের মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুটি সাইক্লোন সেল্টারসহ নদীর কাছাকাছি স্কুল-কলেজের বহুতল ভবনগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে এ সময় উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, মরিচা ও ফিলিপনগর এই চার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে থাকে।

এবারও ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে চরের আবাদি ও ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ। ডুবে গেছে চরাঞ্চলে চাষ করা ধান, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত। তবে পানি লোকালয়ে এখনো প্রবেশ করেনি। গত সোমবার ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজ খুলে দেওয়ার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ওই চার ইউনিয়নের বাসিন্দারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, দৌলতপুর সীমানায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিক রয়েছে। গত সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার ভাগজোত পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পায়নি।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৩ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ২ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার সকালে শূন্য দশমিক ০১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে পানির উচ্চতা ১১ দশমিক ৯৯ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছিল যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার নীচে। উপজেলার চিলমারী হাজী পাণ্ডব আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রায়হানুল হক বলেন, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে সম্প্রতি ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যার কারণে এবার ফারাক্কার ব্যারাজ খুলে দেওয়ার খবরে পদ্মাপাড়ের মানুষের মাঝে বেশি আতঙ্ক কাজ করছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, পদ্মাপাড়ের মানুষদের আতঙ্ক না হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মায় বন্যার বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। ফারাক্কা খুলে দেওয়ার খবরে পদ্মাপাড়ের মানুষদের আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা। দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, বন্যা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যসহ অন্যান্য উপকরণ সামগ্রীর সংকট না হয় সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজ খুলে দেয়ায় বন্যা দেখা দিতে পারে এই আশঙ্কায় নদীপাড়ের মানুষের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় আগাম প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। বন্যা দেখা দিলে বিদ্যালয়ের উঁচু ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।