বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গতমাসে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে গোটা দেশে শুরু হয় এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি। বিক্ষুব্ধ মানুষ হামলা চালায় আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনায়, দলটির নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। জনরোষ থেকে রক্ষা পায়নি থানাগুলোও। বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে কারা থানায় হামলা চালিয়েছিল, আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল বা পুলিশ সদস্যদের হত্যা করেছিল, তার বেশিরভাগ তথ্যই এখনও অজানা। এরই মধ্যে জানা গেল ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেলা যুবদলের সমন্বয়ক আব্দুল মাজেদ।
কুষ্টিয়ায় শেষের দিন যেদিন ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, এখানে আন্দোলনকারীরা আছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন, কুষ্টিয়া থানা আমি মাজেদ নেতৃত্ব দিয়ে ভেঙেছি।’ কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের নেতা আব্দুল মাজেদ এক বক্তব্যে এ কথা বলেছেন। গত বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার খাজানগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় চাঁদাবাজি রোধে চালকল মালিক ও স্থানীয়দের নিয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ কথা বলেন আব্দুল মাজেদ।
সেই সভায় দেওয়া তার ভিডিও বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। ভিডিওতে মাজেদকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার তিনটা ছেলে, আমার পরিবার। আপনাদেরই ভাই, আপনাদেরই চাচি। সে নিজেও এই আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে। আপনারা আপনাদের ছেলেপেলেদের মারেও ঠেকাতে পারেন নাই। রক্তে যখন টান দেয়, তখন জনগণের স্রোত ঠেকানো যায় না। তাই জনগণের স্রোতে হাসিনা চলে গেছে। যুবদল নেতা মাজেদ আরও বলেছেন, আমি আপনাদের বলব আপনারা এমন কিছু করবেন না, যাতে কুষ্টিয়ায় আমাদের দম বন্ধ হয়ে যায়।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী না। জনগণ ভোট না দিলে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দম যেন বন্ধ না হয়। হানিফ, আতা ও খুনি হাসিনার মতো যেন পালাতে না হয়। বক্তব্যের বিষয়ে জানতে জেলা যুবদলের সমন্বয়ক আব্দুল মাজেদের মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বলেন, এ ধরনের বক্তব্য যদি তিনি দিয়ে থাকেন, তাহলে ঠিক করেননি।
বিষয়টি কেন্দ্রকে অবগত করা হবে। কেন্দ্র নির্দেশ দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর কুষ্টিয়া মডেল থানায় চলে ব্যাপক ভাঙচুর। অস্ত্র লুটপাট ছাড়াও থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ৯ আগস্ট কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৮ থেকে ১০ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এস এম আব্দুল আলিম। এজাহারে থানায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়। তবে ঘটনার এক মাস পার হলেও এই মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, থানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় এখনো পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
