আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার জন্য মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে নিজ দলীয় নেতা কর্মিদের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা’র নিকট ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন।

কুষ্টিয়া-২ আসনে মুখোমুখি হচ্ছেন আ.লীগের কামারুল আরেফিন ও জাসদের ইনু
পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে কামারুল আরেফিন উপস্থিত সাংবাদিকের বলেন, আমি একটু আগে ডিসি মহোদয়ের সাথে দেখা করে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি। কুষ্টিয়া-২ আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। যদি আমাকে দল নৌকা দেয় তাহলে আমি দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব। আর দল না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করব। আর সেজন্যই আজ পদত্যাগ করলাম। আমাদের দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে হবে। তাই আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে জনতার কাতারে চলে এসেছি।
এই আসনে জাসদ নেতা ইনু সাহেব আওয়ামী লীগের ৮০ ভাগ ভোটের ওপর ভর করে বিগত তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছে। এ বছর উনার (ইনুর) ২০ ভাগ ভোট নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। তার সময় মিরপুর ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের চারজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাই তাকে আর এমপি হিসেবে দেখতে চায় না। দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা মুখিয়ে আছে আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের নেতা আমি, আমি জনগনের সঙ্গে থাকতে চাই।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু মোট ৪ বার কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা, সংসদীয় আসন-৭৬) আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নিজ দলীয় প্রতীক মশাল বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৮২ হাজার ৬২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এবং নিকটতম ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত (জাপা-জাফর) প্রার্থী আহসান হাবিব লিংকন ধানের শীষ প্রতীকে ৩৫ হাজার ৭৫১ ভোট। এছাড়াও ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে তিনি মাত্র ২১ হাজার ৪১১ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন এবং ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয় অর্জন করেছিলেন।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ সাল থেকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সাল পর্যন্ত তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইন্টারনেট প্রশাসন ফোরামের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারনেট প্রশাসন ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিপূর্বে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব¡ পালন করেন।
এদিকে মিরপুর উপজেলা আওয়ামলী লীগের সাধারন সম্পাদক কামারুল আরেফিন অত্যন্ত জনপ্রীয় এবং কর্মি বান্ধব একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবণের উত্থান শুরু হয়। তৃণমূলের নেতা কর্মিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকার কারণে পরবর্তিতে তিনি পর পর দুইবার মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হন। মিরপুর এবং ভেড়ামারা উপজেলার সর্বত্র রয়েছে তার ভোট। তার রাজনৈতিক জীবনে উত্থানের পিছনে মিরপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন তার ভোট ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু তার বার্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনবার সংসদ সদস্য হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, সেটাও আওয়ামীলীগের সাথে ঐকবদ্ধভাবে নির্বাচন করার কারণে। যদি কুষ্টিয়া-২ আসনে তার ব্যাক্তিগত এবং দলীয় ভোট আছে। তবে সেটা নির্বাচনে জয়লাভ করার ক্ষেত্রে খুবই অপ্রতুল বা নগন্য।
সেই সব দিক বিবেচনা করলে এই আসন থেকে কামারুল আরেফিন এর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে নির্বাচনে জয়লাভ করা তার জন্য অসাধ্য সাধনের মতই হবে বলে আশা করা হয়। আর আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু জয়লাভ না করতে পারলে দলটি অস্বিত্ব সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করেন অধিকাংশ রাজনীতিবিদ। আবার অনেকেই মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এর অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে জয়লাভ করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।
