কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি হানিফ ও আতা সহ ১২ আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি হানিফ ও আতা সহ ১২ আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ গুমের প্রায় ১০ বছর পর মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি দায়ের হয় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়া সদর আমলী আদালতে। সবুজের ছোট ভাই আরিফুল হোসেন সজীবের করা মামলায় আসামী করা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, তার চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতাসহ ১২ জনকে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো বেশ কয়েকজনকে।

কুষ্টিয়া মডেল থানাকে মামলা গ্রহন করে আসামীদের গ্রেফতারের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। আদালতের দাখিল করা এই মামলাটির আইনজীবি এ্যাড. মাহফুজুর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে গুমের অভিযোগে করা মামলায় যাদের বিবাদী করা হয়েছে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সরাসরি এফআইআর ভুক্ত করে পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছেন।

বিবাদিরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার ছোট ভাই আতিকুর রহমান আতিক, শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হালিমুজ্জামান হালিম, কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়া এলাকার আবু তাহের, কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলা এলাকার রমজান হোসেন, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার চক হরিপুর গ্রামের শেখ আফাজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল হোসেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ১৫আগস্ট সবুজ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মজমপুর গেটস্থ বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে শ্রদ্ধা জানাতে যান। ওই সময় কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র এবং উস্কানিমূলক মহড়ার কারণে উপস্থিত অন্যান্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং মোমিজের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়লে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার ১৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সবুজ নামে অপর এক যুবক নিহত হন। ওই সময় সবুজ নামে ওই আওয়ামী লীগের কর্মী খুনের ঘটনার পর উপস্থিত সকল নেতাকর্মী যে যারমত স্থান ত্যাগ করলে কুষ্টিয়া স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজও বাড়িতে চলে যান বিশ্রামের জন্য।

ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে মামলার ১নং আসামি জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার ছোট ভাই আতিকুর রহমান আতিক, শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হালিমুজ্জামান হালিম, কুঠিপাড়া এলাকার আবু তাহের, পেয়ারাতলা এলাকার রমজান হোসেন এবং খোকসা উপজেলার রবিউল হোসেন সবুজের বাড়িতে যান এবং রাগান্বিত হয়ে সবুজকে বলে তোমাকে এখনই নেতার (হানিফের) বাড়িতে যেতে হবে। এসময় সবুজ তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়াকে সাথে নিয়ে হানিফের বাড়িতে যান।

এসময় হানিফ সবুজকে বলেন যদি বাঁচতে চাও তাহলে আমার কথামত চলতে হবে। আর র‌্যালিতে নিহত সবুজের পরিবার তোমার বিরুদ্ধে মামলা মামলা করবে। তুমি লাবু (১নং আসামি)’র সাথে গাজীপুরের ড্রীম স্কয়ার রিসোর্টে চলে যাও। আমি রিসোর্টের মালিককে বলে দিচ্ছি সেখানে তুমি নিরাপদে থাকতে পারবে। হানিফের কথামত অন্যান্য আসামিদের মদদে রিসোর্টে ওঠেন। সেখানে ৪দিন অবস্থান করার পর ২১ আগষ্ট ভোরে ওই রিসোর্ট থেকে ১০/১২জন সাদা পোশাকধারী লোক সবুজকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন সবুজের আর কোন সন্ধান পায়নি পরিবার।

নিঁখোজ সবুজের পরিবার সম্ভাব্য সকল স্থান ও ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন খোঁজ পায়নি। এমনকি সবুজের সন্ধান বের করার আবেদন নিয়ে প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। একই ভাবে অজ্ঞাত সাদা পোশাকধারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেও থানায় মামলাটি গ্রহন করা হয়নি। এতে নিখোজ সবুজের পরিবারের বদ্ধমুল ধারনা ও সন্দেহ যে মাহবুবুল আলম হানিফের নেতৃত্বে আসামীদের যোগসাজসে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সবুজকে গুম করা হয়েছে।

আজকে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে গুম হওয়া সবুজের সন্ধানসহ এঘটনায় জড়িত সকল আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আবেদন করেন গুম হওয়া সবুজের ছোট ভাই কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ কাইজার হোসেনের ছেলে আরিফুল হোসেন সজিব বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার বিষয়ে শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া জানান আমার স্বামী অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিল। কুষ্টিয়া পৌরমেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে পৌরবাসির সাথে ভালো সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ হানিফ আতা সদর খান কেউই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। আর সেই কারনে আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে গুম করে রাখা হয়েছে। জিনিয়া দাবি করেন স্বামী ছাড়া সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। হানিফসহ অন্যান্য সব আসামিদের গ্রেফতার করা হলে অবশ্যই আমার স্বামীর হদিস পাওয়া যাবে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, ‘বিষয়টি শুনেছি তবে এবিষয়ে আদালতের আদেশের নথি এখনও থানায় আসেনি। নথি পেলে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।