কুষ্টিয়ায় শিশু পরিবারে নিম্নমানের খাবার দেয়াসহ নির্যাতন ও অনিয়মের অভিযোগ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় শিশু পরিবারে নিম্নমানের খাবার দেয়াসহ নির্যাতন ও অনিয়মের অভিযোগ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ৯, ২০২৪

নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারে (এতিমখানা) নিম্নমানের খাবার দেয়া, শিশুদের জন্য সরবরাহকৃত মালামাল বিক্রি, শিশুদের নির্যাতন সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ করেছে সেখানকার শিশুরা। গতকাল শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে এতিম শিশুরা এই বিক্ষোভ মিছিল করে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে তাদের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা। এসময় সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত উপ তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামানকে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে নির্যাতনের শিকার হয়ে রিজভী নামের এক শিশু ৬ দিন আগে সেখান থেকে পালিয়েছে।

সেদিন থেকে নিখোঁজ রয়েছে শিশুটি। আন্দোলনকারী শিশুরা জানায়, শিশু পরিবারে দৈনিক খাবার তালিকায় যে খাবার সরবরাহের কথা, তা খেতে দেয়া হয় না। বিপরীতে নিম্নমানের খাবার অল্প পরিমাণে দেওয়া হয়। পচা মাছ খাওয়ানো হয়। গরু বা খাসির মাংস খাবার তালিকায় থাকলেও বিশেষ দিন ছাড়া সেগুলো রান্না করা হয় না বা খেতে দেয়া হয় না। এ ছাড়া প্রতিদিন মোটা চাল ও পানির মতো পাতলা ডাল রান্না করে দেওয়া হয়। খাবার নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বরত ইলিয়াস ও আসাদুজ্জামান স্যার আমাদের জন্য সরবরাহ করা মালামাল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। তাদের নির্যাতনে এখান থেকে রিজভী পালিয়েছে। সে এখানো নিখোঁজ রয়েছে। আমরা জড়িতদের তাদের পদত্যাগ ও শাস্তি চাই। আন্দোলনকারী শিশুরা আরও অভিযোগ করেন জানান, শিশু পরিবারে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস ও ভারপ্রাপ্ত উপ তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান বিভিন্ন সময় এতিম শিশুদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে থাকেন।

কাজ করতে শিশুদের বাধ্য করেন। কাজ না করলে আমাদের বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। মারধর ও নির্যাতন করা হয়। এদিকে গত ২ নভেম্বর থেকে রায়হান হোসেন রিজভি (১২) নামের এক আবাসিক এক শিশু নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় ৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে তার স্বজনরা। নিখোঁজ রিজভীর স্বজনরা বলেন, কুষ্টিয়া শিশু পরিবারে রিজভী তিন বছর ধরে থাকে। হঠাৎ করে গত ২ নভেম্বর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছেন। শিশু পরিবারের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন অনিয়ম-দুর্নীতি করে। শিশুদের ঠিকমতো খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে না। এছাড়াও সে বিভিন্নভাবে শিশুদের নির্যাতন করে। রিজভীকেও সে নির্যাতন করে। রিজভী নিখোঁজ রয়েছেন, আমরা খুব টেনশনে আছি। আমরা রিজভীকে ফিরে পেতে চাই। রিজভী নিখোঁজের দায় ইলিয়াস হোসেনের। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস ক্যানেলপাড়া এলাকায় এতিম ও অনাথ শিশুদের জন্য একটি সরকারি শিশু পরিবার চালু করে সরকার।

জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে সরকারি শিশু পরিবারে ১০০ আসন আছে। বর্তমানে এ শিশু পরিবারে ভর্তি শিশু আছে ৬২ জন। সরকারি শিশু পরিবারের (বালক) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত উপ তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেন, শিশুদের নির্যাতন ও অনিয়ম-দুর্নীতি অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগ গুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হোক। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পেলে শাস্তি মেনে নিবো আমরা। এবিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, শিশু পরিবার থেকে রিজভী নামের এক শিশু পালিয়েছে। সে বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিশুটিকে খুঁজে পেতে কাজ করছে পুলিশ। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্যাতনের অভিযোগটি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় জিজ্ঞেসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।