কুষ্টিয়া সদরের ৯নং ঝাউদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ার তণু’র নির্বাচনী এজেন্ট মতিয়ার রহমানের উপর হামলা করে ঐ ইউনিয়নের ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী এজেন্টদের কাগজ পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সময়ের আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের আলোচিত দুই সন্ত্রাসী ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ও ঐ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় মতিয়ার গুরুতর আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, এক সময়ের আলোচিত এবং এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মূল হোতা ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ও ঐ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মজিদ দলবল সহ গতকাল শনিবার (৬ জানুয়ারী) সন্ধায় ২ নং ওয়ার্ডের মাছপাড়া এলাকার বাসিন্দা মতিয়ার রহমান ও তার মেজ ভাই জলিলের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। হামলার বিষয়ে আহত মতিয়ার রহমানে ছেলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি আর আব্বু মিলে ঘরের ভিতর বসে ঈগলের টোকেনের সিরিয়াল মেনটেইন করছিলাম।
এরপর আমার মেজ চাচা এসে বসে। তারপর পরই চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ গ্রামের লোক জন আসে। মেম্বার আমার আব্বুর কলার ধরে টান দেয়। এরপর উঠানে নিয়ে বেধড়ক কিল ঘুষি মারে। চিকিৎসাধীন মতিয়ার বলেন, আমি আমার ছোট ছেলে সিদ্দিকুর রহমান ভোটার লিস্ট এবং টোকেন নিয়ে বসেছিলাম। এরপর আমার মেজভাই একটা কথা বলার জন্য আসলো এবং আমি তাকে বসতে বললে সে বসে। এরপর মেহেদী, নজরুল, সুজা মেম্বার, ফজের, চাঁন এবং আরিফুল সহ আরো অনেকে এসে হাজির হয়।
কিছুক্ষণ পর মজিদ মেম্বার আমার শার্টের কলার ধরে টেনে হিচড়ে আমার শার্ট ছিড়ে ফেলে। তারপর মেহেদী আমাকে টান দিয়ে ফেলে ঘরের ফ্লোরে ফেলে দেয়। তারা আমাকে টেনে হিচড়ে বাড়ীর উঠানে নিয়ে যায় এবং কিল ঘুষি মারতে থাকে। সেই সাথে আমার মেজভাইকেও ওরা মারতে থাকে। আমার মেজভাইকে ওরা আমার থেকে বেশী মেরেছে। আমাকে ওরা মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিলো। সেই সময় আমার ছোট ছেলে ও বৌমা তাদেরকে বাঁধা দিলে তার আমাকে ফেলে চলে যায়।
এই বিষয়ে ঝাইদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মজিদ বলেন, মিছে কথা । মতিয়ারের ভাই জলিল আমাদের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। চেয়ারম্যান ৭/৮ জন লোক সহ গিয়ে জলিলকে বলে তোমরা দুই ভাই যখন দুই দলের মুনাফেকী করছো, তাহলে তোমার মত লোকের ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই। তোমরা ভোট দিতে সেন্টারে যেও না। এরপর তর্কতর্কির একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ওর ভাইকে ধাক্কা দিয়েছিলো। তারপর চেয়ারম্যান চলে আসলো। আমরা কেউ ঘরেও উঠিনি, কথাও বলিনি।
ঘটনা অস্বীকার করে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষেদের চেয়ারম্যান মেহদেী হাসান বলেন, মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। আমরা কাগজপত্র কেন নিবো। আমি এই বিষয়ে কিছু জানিনা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মামুনুর রহমান বলেন, ঐরকম কিছু না। ওরা আবার আত্নীয় স্বজন। উনার আবার হার্টের সমস্যা আছে। আমরা ঘটণাস্থলে এসেছি। উনাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালে ২৪ সেপ্টম্বর শনিবার ভোরে দীর্ঘদিনের জের ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়ায় প্রতিপক্ষ মজিদ মেম্বর ও মেহেদীর এলোপাতাড়ী আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে সুজা মেম্বর গ্রুপের ইমান আলী (৩৫) ও সাহাবুদ্দিন (৬০) নিহত হয়। ঐ সময় গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ৭ জন আহত হয়। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মজিদ মেম্বর ও সুজা মেম্বর গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে সুজা গ্রুপের সমর্থকরা জীবনের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। হঠাৎ সুজা মেম্বরের লোকজন এলাকায় বসবাস করার জন্য মজিদ মেম্বরের নিকট আত্মসমর্পন করার জন্য এলাকায় ফিরে আসে। এ সংবাদ মজিদ মেম্বর জানতে পারলে ক্ষিপ্ত হয়ে হঠে এবং শনিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ব্যাগ ভর্তি কাধে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি নিয়ে প্রকাশ্যে মজিদ মেম্বর ও মেহেদৌ গুলি বর্ষন করতে করতে ইমান আলী ও সাহাবুদ্দিনের বাড়ীর দিকে যেতে থাকে। পথের মধ্যে ইমান আলীকে দেখা মাত্রই তাকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লে ইমান আলী আহত অবস্থায় তার বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। ইমান আলীকে ঘরের মধ্যে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে। একই ভাকে সাহাবুদ্দিনকে গুলি করলে সে মারাত্মক আহত হয়। এ সময় সাহাবুদ্দিনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। নিহত ইমান আলী মাছপাড়া এলাকার মৃত কেতাব আলীর ছেলে ও বৈদ্যনাথপুর এলাকার মৃত মকসেদের ছেলে সাহাবুদ্দিন। ঐ ঘটনায়, ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিট গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুমারখালী উপজেলার চড়াইকোল বাজার থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও দশ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছিলো।
