কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প লাইভস্টক ফার্মারস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ছাগলের ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনস্থ লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টেটি আওতায় ২০১৯ সালে ছাগলের ঘর নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়। এর মধ্যে কুমারখালী পৌর সভার মধ্যে ২৯ টি ঘর বরাদ্দ হয়। পৌর এলাকার খয়েরচারা ও তেবাড়িয়া গ্রামে খামারিদের নিয়ে দল গঠন করা হয়। চলতি বছরে ওই গ্রামের ২৯ জন খামারি মহিলা সদস্যদের ছাগলের ঘর নির্মাণের জন্য ৮০ বাই ৬০ ইঞ্চির টিনের ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ আসে। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ হয় ২৫ হাজার ৫ শ’ টাকা করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খামারিদের নামে বরাদ্দকৃত ২৫ হাজার ৫ শ’ টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে খামারিরা ইচ্ছেমত টাকা যোগ করে ঘর বড় করতে পারবে। কোনক্রমেই এ বরাদ্দের টাকা ঠিকাদার কে দিয়ে কাজ করানোর কোন নিয়ম নেই। কিন্তু কুমারখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন, ২৯ জন খামারি ২৫ হাজার ৫ শ’ টাকার চেকে স্বাক্ষর নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের হাতে টাকা তুলে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর থেকে ৮-১০ হাজার টাকা খরচ করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকর্তা কাকে ঘর দিয়েছে সেটাও বলতে অসুবিধা বোধ করেন। গতকাল সোমবার (২৯ জানুয়ারি) কুমারখালী প্রাণিসম্পদ অফিসে গেলে ঘর তৈরির সরঞ্জাম তার অফিসে পাওয়া যায়। তাতে বোঝা যায় তিনি হয়তো নিজেই ঘর নির্মাণ করছেন। যা সম্পূর্ণ এ প্রকল্পের নিয়মবর্হিভূত। খামারিদের কাছ থেকে চেকে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা উত্তোলন, নিম্নমানের কাজ ও মেয়াদ শেষ হলেও অনেকের এখনো ঘর নির্মাণ করে না দেওয়ায় প্রকল্প নিয়ে সাধারণ খামারিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ প্রকল্পের টাকা নিয়ে নয় ছয় হওয়ায় প্রকল্পের স্বার্থকতা মুখ থুবড়ে পড়েছে।কৃষক ও খামারিদের দাবি, ডা: আলমগীর হোসেন সহ অফিসের কর্মকর্তারা তাদেরকে দিয়ে চেকে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। পরে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। খামারিদের অভিযোগ, প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ২৫ হাজার ৫ শ’ টাকা। কিন্তু তাদের যে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন তাতে খরচ হয়েছে ৮-১০ হাজার টাকা।অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ২৯ জন খামারিকে চেকে স্বাক্ষর রেখে মোট ৭ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫ শ’ টাকা উত্তোলন করে । খামারি স্বপ্না জানান, যে ঘর আমাদেরকে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে সেই ঘরে অনায়াসে শিয়াল বিড়াল ঢুকতে পারবে। এছাড়া নিম্নমানের কাজ হওয়ায় ঘরের দরজা ঠিকমতো বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, ২৫ হাজার ৫ শ’ টাকা আমাদেরকে দিলে আমরা এর চেয়ে উন্নত ঘর বানিয়ে। কিছু টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি কিনতে পারতাম। ঘর নির্মাণে দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে, যদি ঘর ফেরত নিয়ে যায় সেই ভয়ে কিছুই বলিনি। খামারি আজিজা বেগম বলেন , নেট সহ ঘর তৈরির সরঞ্জাম ভালো করে লাগানো হয়নি, দরজাও ঠিকমতো লাগেনা, মোটকথা কোনো কাজই ভালো করে করা হয়নি। শিয়াল কুকুর ঘরে হরহামেশা ডুকতে পারবে। ছাগল রাখলে শিয়ালের পেটে চলে যাচ্ছে। অফিসাররা যে ঘর তৈরি করেছে, সেই টাকা আমাদেরকে দিলে এর চেয়ে ডাবল সুন্দর ও মজমুদ করে ঘর বানাতে পারতাম। খামারি নুর নাহার বলেন, আমরা ছাগলের ঘর পেয়েছি। আমাদেরকে ব্যাংকে নিয়ে টাকা উত্তোলন করে ঘর তৈরি করে দেবেন বলে টাকা নিয়ে যান। টাকার মুখ আমাদের দেখা হয়নি। আমরা নিজেরা যদি ঘর তৈরি করতে পারতাম তাহলে আরো ভালো ঘর হত।এছাড়া তেবাড়িয়া গ্রামের খামারি রিনা খাতুন বলেন, ঘর তৈরির জন্য আমাদেরকে সরকার ২৫ হাজার ৫ শ’ টাকা অনুদান দিয়েছিল, সেই টাকা অফিসের স্যাররা নিয়ে গেছে। আমাদের যে ঘর দিছে সেই ঘর পেয়েছি। ঘরটি আরো ভালো হলে আমাদের সুবিধা হতো। লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের এলএসপি (সমন্বয়কারী) মানিক হোসেন বলেন, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশনা মতে কাজ হয়েছে। এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘উপজেলায় ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ছাগলের জন্য ঘর নির্মাণের জন্য পৌর সভার মধ্যে ২৯ জনের নামে ২৫ হাজার ৫ শ’ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খামারিরা নিজেরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজেরাই ঘর তৈরি করেছে। তবে পছন্দের ঠিকাদার কে নিয়ম বর্হিভূততভাবে এ কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তার কাছে কতজন খামারি ঘর পেয়েছে এবং ঘর নির্মাণ এর তথ্য জানতে চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান। এই বিষয়ে জানতে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আল মামুন হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনান, আমার কাছে তো কেউ এই ধরনের অভিযোগ করে নাই। যদি অভিযোগ আসে আমি খতিয়ে দেখবো।
