কুমারখালীতে শীত কালীন পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত পেঁয়াজ চাষিরা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুমারখালীতে শীত কালীন পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত পেঁয়াজ চাষিরা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩

গেলবছরে ভেজাল বীজের কারণে রোপণের দিন পনেরো পরে জমিতে মারা যেতে থাকে চারা। সেজন্য ফলনও কম পান চাষিরা। এরপর ভরা মৌসুমে কম ফলনের পেঁয়াজ উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা লোকসানে বিক্রি করেন তাঁরা।

কুমারখালীতে শীত কালীন পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত পেঁয়াজ চাষিরা

এসব কারণে প্রধান অর্থকারী ফসল পেঁয়াজ চাষাবাদ থেকে অনেকটায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাষিরা। তবে অসময়ে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। বর্তমানেও ৮০ থেকে ১০০ কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এতেই চলতি অর্থবছরে পেঁয়াজ চাষে ব্যাপক আগ্রহ বাড়িয়েছে চাষিরা। এখন মাঠে মাঠে পেঁয়াজের চারা রোপনে পড়েছে ধুম। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। চাষিদের ভাষ্য, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দামে চাষিরা ছিলেন মলিন। তবে অসময়ে বাজারে চড়া দাম পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় বেজয় খুশি তাঁরা। সে জন্য অতীতের তুলনায় অধিক জমিতে পেঁয়াজের চাষবাদ হবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। কিন্তু এবছর পেঁয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ বেড়েছে পাঁচ – সাত হাজার টাকা। এবছর জমিচাষ, বীজ বপণ, চারা রোপন ও পরিচর্যা, সার, কীটনাশকসহ প্রতিবিঘা পেঁয়াজ চাষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানায় চাষিরা। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতিবিঘায় ৫০ থেকে ৬৫ মণ ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার ( ২৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট ও চাপড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সি ১৫ থেকে ২০ জন মিলে দলবদ্ধভাবে চারা রোপন করছেন। একজন লোহার ছোট লাঙ্গল দিয়ে সারি টানছেন। আর অন্যরা সারিতে পেঁয়াজের চারা রোপন করছেন।

এসময় যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠের কৃষক হাফিজ শেখ জানান, দুই বিঘা জমিতে তিনি চারা রোপন করছেন। বিঘাপ্রতি তাঁর খরচ পড়ছে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। তিনি প্রতিবিঘায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলনের প্রত্যাশা করছেন। কামাল হোসেন নামে আরেক কৃষক জানান, ভরা মৌসুমে কৃষকরা লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষাবাদে হতাশ হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অসময়ে ভাল দাম পাওয়ায় এবছর পেঁয়াজের আবাদ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, এবছর চাষে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে চাষিদের। চাপড়া ইউনিয়নের কবুরাট গ্রামের কিনাজ উদ্দিনের ছেলে মনিরুল ইসলাম ডিগ্রী শেষ বর্ষের ছাত্র। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিকে চাষাবাদ করছেন। তিনি জানান, গতবছর পাঁচ বিঘা জমিতে প্রায় ৩০০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছিলেন। অসময়ে ভাল দামে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। সে জন্য কৃষি অফিসের পরামর্শে চলতি বছরে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপন করছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমান প্রায় ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর। তারমধ্যে ২০২৩ – ২০২৪ অর্থবছরে চার হাজার ৫০০ হেক্টর জমি পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন চারা রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। ইতিমধ্যে ৯০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন হয়েছে। শেষ মূহুর্তে ভাল দাম পাওয়ায় এ চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে কৃষকরা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে পেঁয়াজ চাষাবাদের প্রত্যাশা করছেন কৃষিবিভাগ। জানা গেছে, চারা রোপনের ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের চরম সংকট থাকে। কৃষকদের অতিরিক্ত মজুরি গুণতে হয়। সেসময় শ্রমিক সংকট নিরোসন ও নিজেদের খরচ মেটাতে মাঠেমাঠে চারা রোপনের কাজ করেন বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানান প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সরেজমিন মাঠে মাঠে শিক্ষার্থীদের চারা রোপনের দৃশ্য দেখা যায়।

এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন, ক্যাম্পাস বন্ধ। মাঠে শ্রমিকের চাহিদাও রয়েছে। সেজন্য তিনি প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে পেঁয়াজের চারা রোপনের কাজ করছেন। তাঁর ভাষ্য, অসংখ্য শিক্ষার্থীরা একাজ করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, চলতি অর্থবছরে ২৫০ জন কৃষকে প্রণোদনার সার – বীজ প্রদান করা হয়েছে। এক সপ্তাহে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ হয়েছে। জানুয়ারী মাসের ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত রোপণ চলবে। তাঁর ভাষ্য, অসময়ে পেঁয়াজের চড়া দাম থাকায় এবছর এ চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে কৃষকরা। লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাবে এবার।