কুমারখালীতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করায় তিন দিন ধরে পরিষদের সেবা বন্ধ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুমারখালীতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করায় তিন দিন ধরে পরিষদের সেবা বন্ধ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জানুয়ারি ৮, ২০২৫

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ প্রধান ফটক খোলা হলেও চেয়ারম্যান কার্যালয়ের দরজায় এখনও ঝুলছে তালা। সেজন্য এবং নিরাপত্তার অভাবে পরিষদে আসেন না চেয়ারম্যান। আবার পরিষদের বাইরে ফাইল পত্র নিয়ে সই সাক্ষরে নিষেধ রয়েছে প্রশাসনের। এ সব কারণে গত রোববার থেকে সেবা বন্ধ রয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ৮ নম্বর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। তারা সমস্যা মিটিয়ে দ্রুত সেবা চালুর দাবি জানান। এ বিষয়ে যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখানে নিরাপত্তার অভাবও রয়েছে। তবুও আমি দাঁয়িত্ব নিয়ে বাইরে থেকে কার্যক্রম চালাতে যাচ্ছি। কিন্তু পরিষদের সচিব ফাইল পত্র দিচ্ছেন না।

এতে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি লিখিত জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিষদ চত্বরে সুনসান নিরাবতা। চেয়ারম্যান কক্ষের দরজার ঝুলছে তালা। বারান্দায় কয়েকজন গ্রাম পুলিশ বসে আছেন। নিজ কক্ষে বসে আছেন পরিষদের সচিব। তিনি পরিষদ নিয়ে বেশ চিন্তিত। এসময় চেয়ারম্যানের অভিযোগ স্বীকার করে পরিষদের সচিব রেজাউল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান না থাকায় তিন দিন ধরে পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জনগণ এসে এসে ফিরে যাচ্ছেন। ইউএনওর নির্দেশনা না থাকায় ফাইল পত্র পরিষদের বাইরে দেওয়া হয়নি। তবে নির্দেশনা পেলে বিধি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত শনিবার রাতে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেক কেটে বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে এই কেক কাটা হয়। পরে কেক কাটার ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

এর প্রতিবাদে ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাতেই চেয়ারম্যান কার্যালয়ে তালা দেন। তারপর গত রোববার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করে পরিষদ থেকে সচিব, গ্রাম পুলিশ ও সেবা প্রত্যাশীদের বের করে দিয়ে পরিষদ ভবনের প্রধান ফটকের গেটে তালা লাগিয়ে দেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর খবর পেয়ে গত সোমবার দুপুরে পরিষদ চত্বরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। বৈঠক শেষে তালা খুলে দেন নেতাকর্মীরা। এবিষয়ে বিলকাটিয়া গ্রামের যুবক ওয়াসিম খান বলেন, পরিবারসহ জাপানে যাব। সেজন্য পাসপোর্ট করার জন্য পরিষদে নাগরিক সনদ আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেবা না পেয়ে ফিরে এসেছি। তাঁর ভাষ্য, জন্মনিবন্ধন, ট্রেডলাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে শত শত মানুষ পরিষদে এসে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি দ্রুত সেবা চালুর দাবি জানান। যদুবয়রা ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক প্রান্ত বলেন, পরিষদের সেবা আমারও প্রয়োজন। সকলেরই দুর্ভোগ হচ্ছে।

তবুও আওয়ামী লীগের দোসরদের আর সহ্য করা হবেনা। জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্মদিন উদযাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও আওয়ামী লীগের দোসর পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করায় কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণের আগ পর্যন্ত তালা খোলা হবেনা। নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, যদুবয়রার ঘটনায় কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। পরিষদে এসে নিয়মের মধ্য থেকে সেবা প্রদানে কোনো বাধা নেই চেয়ারম্যানের।