মিরপুরে আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে ‘কৃষকের বাতিঘর’
কুষ্টিয়ায় আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে জেলার মিরপুর উপজেলার কৃষি উন্নয়ন ও সামাজিক সংগঠন কৃষকের বাতিঘর। সোমবার (৩১ জুলাই) উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, এ সংগঠনের সদস্যরা ঘুরে ঘুরে কৃষকদের আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করছেন। সেই সঙ্গে তারা কৃষকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ও উচ্চফলনশীল জাত সম্পর্কে জানাচ্ছেন।

মিরপুরে আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে ‘কৃষকের বাতিঘর’
জানা যায়, স্থানীয় একদল তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছায় কৃষকের বাতিঘর সংগঠনের হয়ে কাজ করছেন। তারা কৃষকদের আধুনিক কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ-প্রকৃতি সচেতন হয়ে চাষাবাদের জন্য সহায়তা করছেন।
কৃষকের বাতিঘর সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে কৃষকদেরকে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে আমন ধানের আধুনিক ও উচ্চফলনশীল জাতের সম্প্রসারণ করাতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উচ্চফলনশীল জাত সম্পর্কে কুষ্টিয়ার কৃষকদের অবহিত করছে কৃষকের বাতিঘর।
আরও জানানো হয়, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের নিয়ে মাঠে বিভিন্ন কর্মশালাও করছে কৃষকের বাতিঘর সংগঠনটির কর্মীরা। আর এই কার্যক্রমে কৃষক, বীজ উৎপাদক, ডিলা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
কৃষক আবু তাহের বলেন, বিজ্ঞানীরা নতুন ধানের জাত আবিষ্কার করেছে যেগুলো নাকি অনেক বেশি ফলন দিতে সক্ষম। আমরা তো সেগুলো সম্পর্কে কখনো সেভাবে জানতেই পারিনি। এখন কৃষকের বাতিঘরের সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে এসে আমাদের এসব ধানের জাতের কথা বলেন, বীজ ও চারার ব্যবস্থা করে দেন। এখন আমরা ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৯৬ এবং ব্রি ধান ৯২, আইআর ১ এবং ব্রি ধান ৭৯ সম্পর্কে জানি। এছাড়া, ভারতীয় ধানের জাত স্বর্ণার বিকল্প হিসেবে ব্রি ধান ৯৩, ব্রি ধান ৯৪ এবং ব্রি ধান ৯৫ সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে মাঠ পর্যায়ে আমনের সর্বোচ্চ ফলনের জাত হচ্ছে ব্রি ধান ৮৭। এসব তথ্য আমরা আগে সেভাবে জানতাম না, তবে এখন কৃষকের বাতিঘরের মাধ্যমে সবই জানি।
ইসলাম আলী নামের অপর এক কৃষক বলেন, ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে ফসলের যত্ন যেমন জরুরি, তেমনি সঠিক জাত নির্বাচন আর ঠিকভাবে পরিচর্যা করতে জানাটাও জরুরি। এছাড়া, বিভিন্ন সময় পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তো আছেই। সেগুলো থেকে রক্ষাও একটা বড় বিষয়। এই বিষয়গুলো এখন আমাদের সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয় কৃষকের বাতিঘর সংগঠনের পক্ষ থেকে। আমরা এখন আধুনিক চাষ সম্পর্কে একটু হলেও জানি।
কৃষকের বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ সাগর বলেন, ১৯৭২ সালের তুলনায় বর্তমানে ধানের উৎপাদন চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধানের চাহিদা বাড়ছে। ধানের উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলে হবে না, বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ধানের জাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রচলিত শস্য বিন্যাস উন্নয়নের মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর বর্তমান প্রজন্ম মাঠে গিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয়। এ জন্য কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেদিক থেকেই আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষকের বাতিঘর।
![]()
এ বিষয়ে যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প -এর পরিচালক (পিডি) কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, বৃহত্তর যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের মানুষের টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের সকলকে সার্বক্ষণিকভাবে তৎপর থাকতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহত করতে না পারলে আমাদের পরনির্ভরশীলতা তৈরি হবে যা কখনোই কাম্য নয়। বিশ্বব্যাপী চলমান সংকটে নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, অধিক ফলনের জন্য বিজ্ঞানীদের পরামর্শ মতে মাটি অনুযায়ী উপযুক্ত জাত নির্বাচন করতে হবে। তাই, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে ২০৩০, ২০৪০ এবং ২০৫০ সালের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তা বাস্তবায়নে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও সকলকে এগিয়ে আসতে হবে, সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এদিক থেকে কৃষকের বাতিঘরের কার্যক্রম সাধুবাদ পাওয়ার মতো।
