রঞ্জুউর রহমান ॥ “ভরবো মাছে মোদের দেশ গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ” প্রতিপাদ্যে কুষ্টিয়ায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ উদ্যাপিত হয়েছে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার (৩১জুলাই) সকাল দশটায় জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর কুষ্টিয়া‘র আয়োজনে কুষ্টিয়া কালেক্টর চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়।
র্যালী শেষে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছাঃ শারমিন আখতার এর সভাপতিত্বে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ তারেক জুবায়ের, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সুফি মোঃ রফিকুজ্জামান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক পারভীন আখতার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক নূরে সফুরা ফেরদৌস, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা, ট্রেজারী ও স্ট্যাম্প শাখা) মোঃ মহসীন উদ্দীন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মোঃ হেলালউজজামান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত মৎস্য খামারী এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মোঃ আব্দুল বারী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষত মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, রফতানি বাণিজ্যের প্রসার সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে। সরকারের সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক নীতি গ্রহণ, মৎস্য গবেষণার উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক ও টেকসই কারিগরি পরিষেবা প্রদানের কারণে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার প্রায় ৬০ ভাগ জোগান দিচ্ছে মাছ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষির অন্যান্য খাত-উপখাতের তুলনায় মাছের উৎপাদন বাড়ার হার বেশি। বিগত ১৫- ১৬ বছরে এ খাতে ১০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, আমরা সকলে জানি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির চাহিদা মেটায় মাছ। বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মাছ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। প্রবাদ আছে “মাছে ভাতে বাঙালি”। একটা সময় ছিল যখন দেশ অনেক জলাশয় ছিল এবং সেখানে স্থায়ী প্রজাতির অনেক মাছ প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত হতো। পরবর্তীতে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত অনেক প্রজাতির মাছ আজ বিলীন হয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশ প্রাকৃতিক ভাবে এতো বেশি আশীর্বাদ পুষ্ঠ যে, মাটিতে যে কোন বীজ ফেলে ফসল উৎপাদন হয় এবং মিঠা পানির সমৃদ্ধি এদেশ। যেখানে মাছ চাষের জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা। আর এই অপার সম্ভাবনা উপলব্ধি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাছ চাষে গুরুত্ব দিয়ে অনেকগুলো প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। আমরা অনেক সময় দেখি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ না করার অনেক খামারি লোকসানের সম্মুখীন হন। সমকালীন বিশ্ব প্রায় সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের মাছচাষ করে কম শ্রম ও পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। এ বিষয়ে আমাদের মৎস্য অধিদপ্তরের যে সকল কর্মকর্তা রয়েছে তারা বিভিন্ন ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে সফলতা আসবেই।
