আওয়ামীলীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকা’র পরাজয়ের শঙ্কা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

আওয়ামীলীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকা’র পরাজয়ের শঙ্কা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ২৮, ২০২৩
আওয়ামীলীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকা’র পরাজয়ের শঙ্কা

”দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে” গত রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করে দলীয় প্রার্থীদের সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামীলীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকা’র পরাজয়ের শঙ্কা

আওয়ামীলীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকা’র পরাজয়ের শঙ্কা

আওয়ামীলীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকা’র পরাজয়ের শঙ্কা

তিনি আরো বলেছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় কেউ পাশ করে আসতে পারবেন না। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোন নেতা বা ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন বলেও তিনি রোববার গণভবন থেকে জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য ও বক্তব্যের পরে নড়ে চড়ে বসতে শুরু করেছেন দলীয় পদ বঞ্চিত এবং দলীয় পদধারী মনোনয়ন বঞ্চিত জনপ্রিয় প্রতিনিধিরা। যার প্রতিফলন সুস্পষ্টভাবে কুষ্টিয়াতেও পড়েছে।

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে কুষ্টিয়ার ৪টি আসনে গতকাল সোমবার (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত ২৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে আওয়ামী লীগের নিজ দলীয় একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে তারা বর্তমান সংসদ সদস্যদের থেকে বেশী জনপ্রিয়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। কুষ্টিয়ার ৪টি আসনে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা করে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন মোট ৪১ জন।

এদিকে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত কুষ্টিয়ার সংসদীয় ৪টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনে নৌকার প্রার্থী ঘোষনা করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং কোন কারণ উল্লেখ ব্যতিরেকে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা, সংসদীয় আসন-৭৬) আসনে কাউকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেয়নি দলটি।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর, সংসদীয় আসন-৭৫) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন মোট ১৭ জন এবং আওয়ামলীগের দলীয় প্রতীক নৌকায় নির্বাচন করার জন্য দলীয় ছাড়পত্র পান ঐ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আহবায়ক এবং কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ। এছাড়াও আওয়ামী আইনজীবী কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা, সংসদীয় আসন-৭৬) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন মোট ৬ জন। এই আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে নিশ্চিত করেনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।

অপরদিকে কুষ্টিয়া-৩ (সদর, সংসদীয় আসন-৭৭) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন মোট ৬ জন এবং আওয়ামলীগের দলীয় প্রতীক নৌকায় নির্বাচন করার জন্য দলীয় ছাড়পত্র পান ঐ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

এছাড়াও কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা, সংসদীয় আসন-৭৮) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন মোট ১২ জন এবং আওয়ামলীগের দলীয় প্রতীক নৌকায় নির্বাচন করার জন্য দলীয় ছাড়পত্র পান ঐ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। পারিবারিকভাবে সেলিম আলতাফ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক সাংসদ গোলাম কিবরিয়ার দৌহিত্র তিনি।

এদিকে বার বার একই প্রার্থীদের দলীয় মনোয়ন দেওয়ার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতা কর্মিরা। তারা মনে করেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় ভাবে কাউকে দুইবারের বেশী মনোনয়ন দেওয়া ঠিক না। কারণ হিসাবে তারা উল্লেখ করেন, বার বার একই প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ফলে রাজনৈতিক মেরুকরণের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ঐ নেতার সু-নজরে না আসতে পারলে দলীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। দল তাদের কোন খোঁজ খবর রাখে না।

তৃনমূলের একাধিক নেতা কর্মিরা বলেন, বার বার একই ব্যাক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার ফলে দলের ভিতরে অভ্যন্তরীন কোন্দল বৃদ্ধি পায়, যার প্রমান কুমারখালী ও খোকসার রাজনীতির অঙ্গন। একই পরিবারের নিকট আওয়ামলীগের রাজনীতি বাঁধা পড়েছে। এই আসনে আওয়ামলীগের দলীয় সুযোগ সুবিধা শুধু মাত্র ঐ পরিবারই ভোগ করছে। কেউ কথা বলতে গেলে তাকে বিপদে পড়তে হয়। খোকসা-কুমারখালীতে বর্তমানে আওয়ামলীগের নেতা কর্মিদের বিরুদ্ধে ১৫০টির উপরে মামলা আছে।

কুষ্টিয়া সদরের আবস্থাও একই রকম। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। এছাড়াও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ এর ভাই আতাউর রহমান আতা। যার ফলে দেখা যায় কুষ্টিয়া সদর আওয়ামীলীগের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের কোন প্রভাব নেই।

কুষ্টিয়ার মিরপুর-ভেড়ামারা আসনে আওয়ামলীগের নেতাকর্মিদের প্রভাব নেই বললেই চলে। জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল-জাসদ এর সাথে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ঐক্য থাকায় ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগের কোন নেতা কর্মি দলীয় নির্দেশ মোতাবেক ঐ আসন থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেনি। যার ফলে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মিদের মাঝে রয়েছে দীর্ঘ দিনের চাপা ক্ষোভ। এছাড়াও ঐ আসন থেকে জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল-জাসদ নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু প্রভাবশালী হওয়ার কারণে সরকারী ও দলীয় সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে তৃনমূলেরর নেতা কর্মিরা দীর্ঘ দিন বঞ্চিত বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের অবস্থাও একই রকম। দলীয় নেতা কর্মিরা বিভিন্ন সময়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশও করেছেন। এছাড়াও এমপি কর্তৃক নিজের কাছে নেতা কর্মিদের বেশী বেশী সুযোগ সুবিধা দিয়ে অন্য নেতাদের অনুসারীদের বঞ্চিত করার মত অভিযোগ রয়েছে। যদিও দলীয় স্বার্থে এসব বিষয়ে কেউ মিডিয়ার সামনে মুখ খুলতে চান না। তবে কুষ্টিয়া জেলা ব্যাপী আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা। তবে যদি দলীয় কোন যোগ্য নেতা বা প্রার্থী এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহন করে, সেই ক্ষেত্রে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারীদের জয় লাভ করা কঠিন হবে। সেই ক্ষেত্রে গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মত নৌকার ভরা ডুবি হলেও আশ্চর্জ হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতা কর্মিরা।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সোমবার (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যারা হলেন, মোঃ শাহরিয়ার জামিল (স্বতন্ত্র প্রার্থী), মোঃ রেজাউল হক চৌধুরী (স্বতন্ত্র প্রার্থী), মোঃ ফারুক হোসেন (স্বতন্ত্র প্রার্থী), মহাঃ ফিরোজ আল মামুন (কোন দলের নাম নেই), মোহাঃ মজিবুর রহমান (কোন দলের নাম নেই), শরিফুল কবির স্বপন (কোন দলের নাম নেই), মোঃ ফজলুল হক (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) এবং মোঃ আসাদুজ্জামান উৎপল (জাকের পার্টি)।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে গতকাল সোমবার (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যারা হলেন, ডাঃ ইফতেখার মাহমুদ (কোন দলের নাম নেই), সৈয়দ কামরুল আরিফিন (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ), সরদার মোঃ মুসতানজিদ (স্বতন্ত্র প্রার্থী), এ জে এম শাহিদুজ্জামান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), মোঃ রুবেল পারভেজ (স্বতন্ত্র প্রার্থী), হাসানুল হক ইনু (জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল-জাসদ), মুহাঃ শহীদুল ইসলাম ফারুকী (কোন দলের নাম নেই) এবং মোঃ রওশন আলী (জাকের পার্টি)।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে গতকাল সোমবার (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত ৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যারা হলেন, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (স্বতন্ত্র প্রার্থী), মোঃ মাহবুবউল আলম হানিফ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), মোঃ ফরিদ উদ্দিন শেখ (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), মেহেদী হাসান রিজভী (বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন), কে এম জহুরুল ইসলাম (বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ), মোঃ পারভেজ আনোয়ার তনু (স্বতন্ত্র প্রার্থী) এবং মীর আবু আশরাফ শাহিনুর (জাকের পার্টি)।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে গতকাল সোমবার (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত ৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যারা হলেন, মোঃ খাইরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র প্রার্থী), মোঃ শহিদুল ইসলাম (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) এবং আবদুর রউফ (কোন দলের নাম নেই)।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর। ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।