কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক রায়: ২০টি গাছ রোপন, অন্যান্য শর্তে অভিযুক্তদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মাননীয় বিচারক অতিরিক্ত দায়রা জজ মুহম্মদ আলী আহসান-এর আদালত সোমবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টায় এক ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক রায়: ২০টি গাছ রোপন, অন্যান্য শর্তে অভিযুক্তদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ
২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানাধীন ফিলিপনগর দফাদার পাড়া মোড়স্থ জনৈক হাবিলের বাড়ির পিছনে রাস্তার উপর আসামী মোঃ তুষার ওরফে তৃষ’র কাছে থাকা প্লাষ্টিকের বাজার ব্যাগ তল্লাশী করে ৩০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বি(১)(বি) ধারায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৯৯/২০১৬ [জি. আর ১১৮/২০১৬(দৌলতপুর)] মামলা দায়ের করেন।
সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বি(১)(বি) ধারার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আসামীকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত। পরে অভিযুক্তদের জীবনে প্রথমবারের মতো অপরাধ বিবেচনায় ও তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুরুতর না হওয়ায় এবং আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রায় ৭ বছর নিয়মিত হাজিরা দেয়ার কারণে আদালত তাদেরকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ প্রদানকল্পে “প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সের ১৯৬০” অধীনে ২০টি গাছ রোপন, নতুন করে কোনো অপরাধে জড়িত না হওয়া, মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা, শান্তি রক্ষা ও সদাচরণ করা, আদালতের নির্দেশমত হাজির হওয়া ইত্যাদি শর্তে মুক্তি দেন আদালত।
এই শর্তগুলো প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করবেন। কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য রাজীব আহসান রঞ্জু বলেন- দন্ডপ্রাপ্ত অপরাধী কারাগারে আবদ্ধ কক্ষে নয়, মুক্ত বাতাসে পরিবার পরিজনের সান্নিধ্য পাবেন যা অভিযুক্তদের সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর আলম গালিব বলেন- অধ্যাদেশটি অনেক পুরোনো হলেও প্রয়োগ ছিল না উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের নির্দেশনার আলোকে কুষ্টিয়ার জেলা জজ আদালতে এর দৃশ্যমান প্রয়োগ শুরু হয়েছে বলে প্রথম ও লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন খুব ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে অভিযুক্ত নিজেদের সংশোধনের চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন। আদালত উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন- লঘুদন্ডে অনেকেই কারাগারে গিয়ে আসামীর সংস্পর্শে ভবিষ্যতে গুরুতর অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।

প্রবেশনের ফলে নিজেকে সংশোধন ও অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে অভিযুক্তরা উৎসাহী হবে। দেশের কারাগারগুলোয় প্রায় প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আসামী রাখা হচ্ছে। প্রবেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত অপরাধীরা সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরে আসবে ও কারাগারগুলো মাত্রাতিরিক্ত কয়েদী হতে ভারমুক্ত হবে।
উল্লেখ্য, মুহম্মদ আলী আহসান অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে যোগদানের পর হতে অদ্যবধি ১০টি ফৌজদারী মামলায় আসামীদের প্রবেশনে প্রেরণ করে সংশোধনের সুযোগ দান করেন।
