বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে জর্জরিত কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ১৩৬ বছরের পুরোনো কুর্শা কে.এন. মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ জমি দখল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জাল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন সনদে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ ঘিরে চরম সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী ও ১৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন।
তবে গত এক যুগ ধরে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ক্রমেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়টি প্রায় ১০ একর (৪০ হাজার বর্গমিটার) জমির ওপর গড়ে উঠলেও বর্তমানে এর পরিমাণ নেমে এসেছে মাত্র ৩ একরে। বাকি জমি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই জমি উদ্ধারে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
বিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে শহিদুল ইসলাম ও হাসিনা খাতুন এবং কৃষিশিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে আরমান আলী প্রায় এক দশক আগে নিয়োগ পান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই তিন শিক্ষক জাল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে এবং মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করে আসছেন বলেও জানা গেছে। সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক হাসিনা খাতুন ও কৃষিশিক্ষা শিক্ষক আরমান আলীর সঙ্গে কথা বলা গেলেও অপর অভিযুক্ত শিক্ষক শহিদুল ইসলাম কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদের কপি দেখাতে ব্যর্থ হন। তিনি জানান, বিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণের নিরাপদ ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা নিজেদের সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিজ নিজ বাসায় রেখে থাকেন। পরবর্তীতে সনদের কপি দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কুর্শা কে.এন. মাধ্যমিক বিদ্যালয় (পূর্বনাম: কুর্শা কে.এন. বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়) কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নে অবস্থিত এবং যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত। ১৮৮৯ সালে স্থানীয় হিন্দু জমিদার কেদার নাথ জোয়ার্দার প্রায় ১০ একর জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।
শুরুতে এটি ১ম থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত ইংলিশ মিডিয়াম (এমই) বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন প্রতিষ্ঠাতার পুত্র হরিনাথ জোয়ার্দার। ১৯৫৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ১৯৮৩ সালে পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে একাধিক প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ সোলাইমান হোসেন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জিয়াউর রহমান। স্থানীয় সচেতন মহল দ্রুত অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত, দখলকৃত জমি উদ্ধারে প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং জাল সনদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
