নিখোঁজের ৯ দিন পর আন্নুর লাশ উদ্ধার: কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

নিখোঁজের ৯ দিন পর আন্নুর লাশ উদ্ধার: কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ২৬, ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রহমানের নামাজে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শ্রমিক দলের এই নেতার নামাজে জানাযায় জেলা বিএনপি তাদের বিভেদের কথা ভূলে এককাতারে দাড়িয়েছিলেন। রাজনৈতিক মাঠে বিভেদ থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাত ৮টার সময় কুষ্টিয়া জিলা স্কুল প্রাঙ্গনে আন্নুর নামাজে জানাযায় এক কাতারে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কুষ্টিয়া-৪ আসনে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ।

কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপি সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার। জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান কাজল মাজমাদার ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামিমউল হাসান অপু, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক বশিরুল আলম চাঁদ, কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি এ কে বিশ্বাস বাবু ও সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইসমাইল হোসেন মুরাদ ও জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবসহ বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এছাড়া আত্মীয় স্বজনসহ হাজারো মানুষ নামাজে জানাযায় অংশ নেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার সময় কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে নিখোঁজ হওয়ার নয় দিন পর কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রহমান আন্নু (৫৬) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরিদপুর জেলা সদর উপজেলার ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের কবিরপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর শ্রমিকদল নেতা আন্নুর লাশ নিয়ে আসা হয় কুষ্টিয়াতে। শেষ বারের মতো তাকে বিদায় জানাতে শহরের মজমপুরে তার নিজ বাড়িতে আত্মীয় স্বজনেরা ছুটে আসেন। পরিবারের আহাজারিতে শোকাহত ছিলো পুরো এলাকাজুড়ে। এদিকে তার মৃত্যুতে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি, শ্রমিকদলসহ বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

প্রসঙ্গত: ফরিদপুর অঞ্চলের কোতয়ালী নৌ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন পদ্মা নদীর তীরবর্তী ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের কবিরপুর চরের মধ্যেঅজ্ঞাতনামা পুরুষ (৫০)-এর মৃতদেহ স্থানীয় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। এ প্রেক্ষিতে কোতয়ালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই (নিঃ) তপন নন্দী সঙ্গীয় ফোর্সসহ ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরন করেন। এর আগে ১৬নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর মৌজার পদ্মা নদীতে নিখোঁজ হন।পরের দিন ১৭ নভেম্বর আন্নুর স্ত্রী জিয়াসমিন আরা রুমা  কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিহত আবেদুর রহমান আন্নু কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুর এলাকার মৃত-মতিয়ার রহমানের ছেলে। জানা গেছে, গত ১৬ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে আন্নু পদ্মা নদীর হাটশ হরিপুর মোহনায় যান।

সকাল ১১টার দিকে চর ভবানীপুর এলাকায় যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবোঝাই বাল্কহেড ট্রলারের সঙ্গে তার ডিঙ্গিনৌকার ধাক্কা লাগে। এতে আন্নু ও নৌকার মাঝি পানিতে পড়ে যান। স্থানীয় জেলেরা নৌকার মাঝিকে উদ্ধার করলেও শ্রমিক নেতা আন্নুর আর খোঁজ পাওয়া যায় না। এতে করে নানান প্রশ্ন জাগে মানুষের মনে। নিখোঁজ হওয়ার নয় দিন পর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়। এদিকে জানাযা নামাজে অংশ নিয়ে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান কাজল মাজমাদার বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমার সাথে আন্নুর সম্পর্ক, সে আমার ভাই। আমার মাকে সে মা বলে ডাকতো। আমাদের সম্পর্কে কখনো বিচ্ছেদ ঘটেনি। নদীতে যেদিন ঘটনাটি ঘটেছে, সেদিন আন্নু তার কর্মক্ষেত্রে সেখানে গিয়েছিলো। সেদিন একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। এ নিয়ে অনেক ধরনের কথা বার্তা উঠছে।

আমাদের যে বন্ধন সেই কথা কারো কাছে বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি সর্বচ্চ দিয়ে জেলা বিএনপি আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। এব্যাপারে জাকির ভাই সহযোগিতা করেছে। প্রশাসনের জিডি করা থেকে, নৌ পুলিশের সাথে কথা বলা হয়েছিলো। সেখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, অনেকে অনেক কথা বলছে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছিলাম, পরিবারের সাথে কথা বলেছি। সার্বক্ষণিক ভাবে পরিবারের পাশে ছিলাম। পরে আন্নুর ফোন নম্বর থেকে জেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মেজবাউর রহমান পিন্টুর ফোনে ফরিদপুরের নৌ পুলিশ ফোন দেয়।

বিষয়টি জানতে পেরে আন্নুর স্ত্রীর সাথে কথা বলে আমরা সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। রাতে সেখানে পৌছানোর পরে জানতে পারি লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। যেহেতু একটা দুর্ঘটনায় আন্নু চলে গেছে, আইনি প্রক্রিয়ায় ফরিদপুরে ময়না তদন্ত হয়েছে। আমরা ঘটনার সময় যেহেতু সেখানে ছিলাম না, যে ঘটনা ঘটেছে আমাদের সকলের শোনা কথা। কিন্তু পোস্টমটেম রিপোর্টটা আসুক। আমার কথা ন্যায়টা সামনে আসুক, ওর সাথে কেউ কোন অন্যায় করে থাকলে, আপনারা পাশে থাকলে এর সঠিকটা সামনে আসবে। আমি চাই সঠিকটা সকলের সামনে আসুক, আন্নুর পরিবার যেনো ন্যায়টা পায়। এছাড়া বিএনপির অন্যান্য নেতারা বক্তব্য শেষে মরহুমের জান্নাতবাসী কামনা করেন।