বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর, চিলমারী ও মরিচা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে পুনরায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও জমি মালিকরা। তাদের দাবি, “টুকু ও গিট্টু সোহাগ” নামে পরিচিত একটি গ্রুপ চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলি জমি জবরদখল করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মালিকদের জমি অন্যদের কাছে অর্থের বিনিময়ে বর্গা (গিরফি) দিয়ে দিচ্ছে। এই বাহিনীর সক্রিয় সদস্যরা হলো-একাধিক হত্যা, অস্ত্র, চুরি, মাদক, মারামারি, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি সহ অন্যান্য মামলার আসামী, শ্যুটার “গিট্টু সোহাগ”, নাঈম, রাসেল,আল-আমীন, রওশন, নিজাম, খেড়ুর ছেলে রুশমান, আমিরের ছেলে আলা, নাহারুলের ছেলে মামুন, সুকচাঁদ ও সুকচাঁদের দুই ছেলে বিমল ও বিপ্লব, জামাত প্রামানিকের ছেলে হানা প্রামানিক সহ আরো অনেকে, আর এই গিট্টু সোহাগ সন্ত্রাসী বাহিনীদের সকল অপকর্মের হুকুমদাতা-অস্ত্র ব্যাবসায়ী, একাধিক হত্যা মামলার আসামী,সন্ত্রাসী “তরিকুল ইসলাম টুকু”।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের সুযোগে এসব গ্রুপসহ বিভিন্ন বাহিনী এলাকায় পুনরায় সক্রিয় হয়ে পড়ে।গত ৯ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান “অপারেশন ফার্স্ট লাইট”-এর পর অনেক বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়লেও “গিট্টু সোহাগ ও টুকু”বাহিনীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে দাবি বাসিন্দাদের।চরাঞ্চলের জমি মালিকদের অভিযোগ, পদ্মা নদীর পানি কমে চরাঞ্চলের ডুবে যাওয়া জমি পুনরায় জেগে ওঠায় মালিকেরা স্বাভাবিকভাবে কৃষিকাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিলেও এখন তারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী,”টুকু ও গিট্টু সোহাগ”বাহিনীর সদস্যরা জমি মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করছে এবং অন্যদের কাছে বর্গা দিয়ে অর্থ আদায় করছে।এতে বহু জমি মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণনাশের আশঙ্কায় কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। গরুর বাথান মালিকরা দাবি করেছেন, এই বাহিনীর সদস্যদের টাকা না দিলে তারা গরু-মহিষ চরাঞ্চলে নিতে পারছেন না, অনেকে বাধ্য হয়ে ‘জিম্মি পরিস্থিতিতে’ রয়েছেন। অতীতের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর ইতিহাসমতে স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০১ সালে পদ্মার চরে লালচাঁদ বাহিনী গঠিত হয়, যারা দীর্ঘ এক দশক এলাকায় খুন, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালায়।
২০০৯ সালে লালচাঁদ নিহত হওয়ার পর বিভিন্ন উপ-গ্রুপ ভাগ হয়ে এলাকায় সক্রিয় হয়। সেসব বাহিনীর কিছু সদস্যই পরবর্তীতে নতুন গ্রুপে যুক্ত হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ চরবাসীর,বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কিছু প্রভাবশালী পরিবার ও স্থানীয় অস্ত্রধারীরা এসব গ্রুপকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।
উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিককে বলেন,“বিষয়টি অফিসে এসে আলোচনা করলে বিস্তারিত জানানো হবে, নতুবা ভেড়ামারা সার্কেলের কাছে জানুন, এদিকে সাংবাদিক একাধিকবার ফোন করেও ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের যোগাযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সোলায়মান শেখ জানান “আমরা উক্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত আছি। চরাঞ্চলে জমি দখল বিষয়ক বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। গিট্টু সোহাগ বাহিনী সহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে ও অভিযান চলমান। অপরাধী যে-ই হোক, আইনের আওতায় আনা হবে। ”জমি মালিকদের প্রত্যাশা-শুধু তাদের নিজস্ব জমিতে চাষ করে সংসার চালাতে চান। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জবরদখলের ভয় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করছে। তারা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ চান।
