কুষ্টিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জানুয়ারি ১২, ২০২৫

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ড্রাম ট্রাকের চাপায় এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও তিন শ্রমিক। গতকাল শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৮ টা ১০ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতুর পূর্বদিকে বাঁশআড়া এলাকা এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকের নাম মো. রাজু (২৪)। তিনি উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া গ্রামের মাসুদ রানার ছেলে। আহতরা একই এলাকার সিরাজুল (৩৫), বিল্লাল (৩৩) ও আশরাফ (৩৫)। তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ দিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন ও সড়কে ড্রাম ট্রাক চলাচল বন্ধ ও দুর্ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন কয়েক শত বিক্ষুব্ধ জনতা।

তারা সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে সড়কের পশ্চিম ও পূর্বদিকে কয়েক কিলোমিটার যানযট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করলে অবরোধ তুলে নেন তারা। অপরদিকে সড়কের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়াই নদীর কয়া বাজার এলাকায় ৯টি ড্রাম ট্রাক, ৫টি ভেকু ও ২টি প্লেটার যন্ত্র ভাঙচুর এবং যন্ত্র গুলোর ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক ধারণা করছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার কয়া ইয়নিয়নের কয়া ও রায়ডাঙা মৌজায় গড়াই নদীর ড্রেজিংকৃত বালু অপসারণের ইজারা নিয়েছেন কুমারখালীর মেসার্স প্রিয়াংকা ট্রেডার্স। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় পাঁচ কোটি ১৭ লাখ টাকায় ইজারা দেন। ঠিকাদার জাহিদুল হোসেন ইজারাকৃত বালু ভেকু ও প্লেটার দিয়ে কেটে ড্রাম ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন।

ট্রাক গুলো কুষ্টিয়া – রাজবাড়ী সড়কের সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতুর পূর্বদিক বাঁশআড়া এলাকায় ইউটার্ন নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। শনিবার সকাল ৮ টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেট্রো -ট ২২২৮০১ ড্রাম ট্রাক একটি পাখিভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এতে ভ্যানের চালকসহ চার যাত্রী ছিটকে পড়ে এবং ট্রাকটি রাজুর মাথায় চাপা দিয়ে নদীতে চলে গেলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। অপর তিনজন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁরা আরো জানায়, দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ জনতা বালু উত্তোলন ও সড়কে ড্রাম ট্রাক বন্ধ এবং ঘটনায় জড়িতের শাস্তির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে উৎসুক জনতা নদীতে থাকা কিছু ড্রাম ট্রাক ও বালু কাটা যন্ত্রে ভাঙচুর ও যন্ত্রাংশ লুটপাটের ঘটনা ঘটায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশত উৎসুক জনতা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। পুলিশ তাঁদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। সড়কের দুদিকে কয়েক কিলোমিটার যানযট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাঁশআড়া এলাকার মুদি দোকানী মোক্তার হোসেন বলেন, সকাল ৮ টা ১০ মিনিটের দিকে ড্রাম ট্রাকটি ইউটার্ন নিতে গিয়ে ভ্যানে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীরা সড়কে পড়ে যায় এবং ট্রাকটি যাত্রীদের শরীরকে চাপা দিয়েই চলে যায়। পরে বিভিন্ন মানুষ এসে প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অপরোধ করে রাখেন। তাঁর ভাষ্য, ট্রাকের কারণে প্রতিদিনই সেখানে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘটনার সুষ্ট বিচার দাবি করে নিহত রাজুর চাচা আমিরুল ইসলাম বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন ও সড়কে ড্রাম ট্রাক বন্ধ এবং শাস্তির দাবিতে আমরা লাশ নিয়ে অবরোধ করেছি। পরে প্রশাসন আশ্বস্ত করলে অবরোধ তুলে নিয়েছি। সরেজমিন গড়াই নদীর কয়া বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশকিছু ড্রাম ট্রাক ও বালু কাটার যন্ত্র ভেকু ও প্লেটারের ভাঙচুরের ক্ষত।

নেই ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশ। এসময় নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক শ্রমিক ও গাড়ি চালকরা বলেন, কয়ার নাছির উদ্দিনের ছেলে মো. পিকলুর নেতৃত্বে ২০-৩০ জন এসে ট্রাক ও যন্ত্র গুলোতে ভাঙচুর করেছে, লুটপাট করেছে। ঠিকাদার জাহিদুল হোসেন বলেন, সড়কের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ অন্তত ১৭টি যানবাহনের ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। থানায় মামলা করা হবে। অভিযোগ অস্বীকার করে মো. পিকলু ফোনে বলেন, ঘটনার সময় নদীতে ছিলাম। অপরিচিত ছেলেপেলে ভাঙচুর করেছে। আমি জড়িত নয়। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি সৈয়দ আল মামুন। তিনি বলেন, ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় একজন নিহত হয়েছেন। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেছিল। এতে কয়েক কিলোমিটার যানযাট সৃষ্টি হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, নদীতে কিছু ট্রাক ও বালু কাটা যন্ত্র ভাঙচুর এবং কিছু যন্ত্রাংশ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বালু ইজারা দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। জনগণের দাবির বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।