কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ দেনা শোধ করতে বাবা-মায়ের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার করেন এক যুবক। সেই টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত বউয়ের সঙ্গে শ্বশুর-শাশুড়ির কলহ লেগেই থাকত। অবশেষে তাদের উপর অভিমান করে ওই যুবক নিজঘরে গলাঁয় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে মৃত্যুর খবর শুনে ছেলের বউকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাঁটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। পরে খবর পেয়ে দুপুর ১২ টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহত যুবকের নাম সুমন হোসেন (২৫)। তিনি উপজেলা বাগুলাট ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের উকিল উদ্দিনের ছেলে।
তিনি কুষ্টিয়ার একটি কারখানায় দিনমজুরের কাজ করতেন। আহত গৃহবধূর নাম শিউলি খাতুন (২৩)। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আছেন। তার মাথায় দুইটি সেলাই দিয়েছেন চিকিৎসক। স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, ঋণ, জমি ইজারা ও ধারদেনা করে প্রায় এবছর আগে দালালের মাধ্যমে প্রবাসে যেতে গিয়ে সুমনের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খোয়া যায়। এরপর প্রায় ছয় মাস আগে বাবা উকিল ও মা আয়জানের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নিয়ে প্রতিবেশী একজনের দেনা শোধ দেন। এই টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত সুমনের বাবা – মায়ের সঙ্গে স্ত্রী শিউলির বাগবিতণ্ডা, তর্কাতর্কি ও কলহ লেগেই থাকত। কলহের জেরে গত সোমবার সন্ধায় সুমনের ঘরের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন মা। এনিয়ে বউ – শাশুড়ির তর্কাতর্কি হয় এবং ধারের টাকা ফেরত চান শাশুড়ি। তর্কাতর্কির খবর শুনে সুমন রাতে তার বউকে মারধর করে। একপর্যায়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রয়োজনীয় মালমাল গুছিয়ে ভ্যান ডাকতে বাড়ির বাইনে যান বউ।
সেই সুযোগে সুমন নিজঘরের আড়ার সাথে গলাঁয় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। তারা আরো জানায়, সুমনের ঝুলন্ত মরদেহটি নামিয়ে সবাই যখন তাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছিলেন। সেসময় সুমনের বাবা উকিল লাঠি দিয়ে আঘাত করে স্ত্রী শিউলির মাথা ফাঁটিয়ে দেন। বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুমনের বাড়িতে উৎসুক জনতা ও স্বজনদের ভিড়। আহাজারি করছেন সুমনের স্ত্রী, বাবা, মা ও স্বজনরা। স্ত্রী শিউলির মাথায় সাদা ব্যান্ডস বাঁধা। তার কোলে ছয় মাস বয়সি কন্যা শিশু সুমি। পাশে দাঁড়িয়ে বিস্কুট খাচ্ছে ছয় বছর বয়সি আরেক শিশু সুমনা। এসময় সুমনের স্ত্রী শিউলি খাতুন বিলাপ করতে করতে বলেন, স্বামী আমার শ্বশুর – শাশুড়ির কাছ থেকে ছয় মাস আগে এক লাখ টাকা ধার নিছিল। এই টাকা নিয়ে শ্বশুর – শাশুড়ি সব সময় আমার সঙ্গে ঝগড়া করে। আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে গত সোমবার বিদ্যুত লাইন কেটে দিলে পুনরায় ঝগড়া হয় এবং তারা টাকা ফেরত চাই।
এনিয়ে স্বামী আমাকে মারধর করলে মালামাল বাঁধে নিয়ে মঙ্গলবার বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তায় ভ্যান ডাকতে গিছিলাম। ফিরে দেখি স্বামী আমার ঘরের ডাবে ঝুলছে। এসময় চিৎকার চেঁচামেচি করলে সবাই ছুটে এসে স্বামীকে নিচে নামায়। আর শ্বশুর আমার মাথা ফাঁটিয়ে দেন। তার ভাষ্য, শ্বশুর ও শাশুড়ির জন্য আমার স্বামী মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই। ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে কই যাব আমি। আপনারা একটা বিচার করে দেন। মাথা ফাঁটানো ও ধারদেনার টাকা নিয়ে পারিবারিক কলহের কথা স্বীকার করেছেন সুমনের বাবা উকিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ছেলের বউ ভালোনা। সব সময় অশান্তি করে বাড়িতে। বউয়ের কারণেই ছেলে মারা গেছে। তবে তিনি কোনো বিচার চাননা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত সুমনের এক ফুফাতো ভাই বলেন, আমার ফুফা ও ফুফি সব সময় সুমনের বউকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। এনিয়ে সুমন খুব অশান্তি পোহাত। স্ত্রী ও বাবা – মায়ের উপর অভিমান করে সুমন আত্মহত্যা করেছে। মাথা ফাঁটানোর বিষয়টি অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, খবর পেয়ে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে পরে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।
