নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণ না করার দাবীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। রবিবার(২০অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার সময় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখা বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের অয়োজনে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন শেষে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছাঃ শারমিন আখতারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া জেলা শাখা বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের সভাপতি হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুশতাক হোসেন মাসুদ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখা বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের সেক্রেটারী মিজানুর রহমান, ১১নং আবদালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন প্রমুখ। এ সময় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সকল পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের অনেক পুরোনো জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ।
বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে, নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বারা পরিচালিত আবহমানকাল থেকে সব রকমের সরকারি-বেসরকারি এবং এনজিও কর্তৃক বিভিন্ন রকম সেবা সহায়তার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান আছে। ইউনিয়ন পরিষদ হতে জন্ম- মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদপত্র, চারিত্রিক ও নাগরিক সনদপত্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ইসুসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সার্বিক সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে গ্রাম্য দাঙ্গা-ফ্যাসাদ মারামারি-কলহ নিরসন সহ অনেক ফৌজদারি ও দেওয়ানি জটিল সমস্যার সমাধান করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সামাজিক নিরাপত্তা সচল রাখছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ। এছাড়াও সরকারি যত সামাজিক সহায়তা আছে; যেমন বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, ডিজিএফ ও ভিডব্লিওবি এর চাল সহ টিসিবি, কৃষি ও মৎস প্রণোদনা বিতরণ করে দেশের সর্বত্র সরকারি সহায়তা পৌছে দেওয়া হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দের মাধ্যমে। যারা জনগণ ও সরকারের নিকট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়বদ্ধ।
পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ বিভিন্ন দল ও মতের সমর্থক হলেও তৃণমূলে দলমত নির্বিশেষে শুধু দলীয় ভোটে নয় বরং ব্যক্তিগত ইমেজের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। একমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেই সর্বোচ্চ ভোট কাস্ট হয়ে থাকে। জনগণকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনোই রাজনৈতিক বিবেচনায় সেবা দেওয়া হয় না। নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ সর্বদা সরকারের সকল নির্দেশনা পালন করে থাকেন এবং সরকারকে সকল ক্ষেত্রে সর্বদা সাহায্যে সহযোগিতা করে থাকেন। চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ কোন সময় সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রমে অতীতে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে) কখনোই অংশগ্রহণ করেনি এখনো করে না, ভবিষ্যতেও করবে না। তৃণমূলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ সর্বদা সকল দলের নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করে থাকেন। একজন চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বদলীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারে রূপান্তরিত হন।
তা না হলে ইউনিয়ন পরিষদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে থাকে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ বর্তমান সরকারের জন্য হমকি নয় বরং সরকার ও জনগণের অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে কাজ করছে। অতএব ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে সবচেয়ে বেশী জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। যা ভেঙ্গে দিলে বা চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণ করা হলে, দেশের গ্রামীণ জনপদের সর্বত্র আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ও অরাজকতা বিরাজ সহ সাধারণ জনগণ সরকারি সার্বিক সহায়তা থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হবে। এতে করে দেশ একটি মেরুদন্ডহীন অচল রাষ্ট্রে পরিনত হবে। তাই কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখা বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের পক্ষ হতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের কাছে, গ্রামীণ সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ও সার্বিক বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দেওয়া বা চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে বিরত থাকার আহবান জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেন।
