স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪১টি বিভিন্ন অস্ত্র এবং ২৮২রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তরা কুষ্টিয়া মডেল থানা ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে অস্ত্র, গোলাবারুদ, আসবাবসহ সরকারি নথিপত্র পুড়ে যায়। এতে থানা, সার্কেল অফিস ও ওসির বাসভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
পরে লুট হয়ে যায় থানায় রক্ষিত অস্ত্র ও গোলা বারুদ। এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালালে সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। জানা যায়, আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে গত সোমবার (৫আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। বেলা একটার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়।
পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করে। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেননি। খবর পেয়ে সেনাসদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। এর পরপরই আন্দোলনকারীরা থানার ভবনে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে থানার ভেতরের সব আসবাব, জরুরি রেকর্ডসহ অন্যান্য দ্রব্য পুড়ে যায়। এ ছাড়া ভবনের সামনে থাকা ৮-১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও কিছু জিনিসপত্র লুটপাট হওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিন শহরের থানাপাড়া এলাকার এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২) পুলিশের গুলিতে নিহত হন। আহত হন শতাধিক ছাত্রজনতা। গত শনিবার (১৭ আগস্ট) কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তরা কুষ্টিয়া মডেল থানা ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় থানায় ৬০থেকে ৬২জন পুলিশ সদস্য ছিল।
এ ঘটনায় আহত হয় ১৫জন পুলিশ সদস্য। তারা বর্তমানে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর থানায় রক্ষিত ২২০ থেকে ২৩০টি অস্ত্র লুট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে অস্ত্র লুটের ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে। এই ঘটনায় আনুমানিক প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।পরে গত কয়েকদিনে র্যাব,পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে এ পর্যন্ত ৪১ টি বিভিন্ন অস্ত্র এবং ২৮২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে।
এই উদ্ধারের মধ্যে সরকারি অস্ত্রের সংখ্যা রয়েছে ১১টি এবং গুলি ১৩৬ রাউন্ড। এছাড়া জনসাধারনের রয়েছে ৩০টি অস্ত্র ও ১৪৬ রাউন্ড গুলি। অপরদিকে গত ১২আগস্ট কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার কার্যক্রম শুরু হয় আমলাপাড়ায় অবস্থিত সদর পুলিশ ফাড়িতে। এদিন যোগদান করেন এক ওসি, তিন এসআইসহ ৯৯জন পুলিশ সদস্য। বর্তমানে নির্ভয়ে তারা দায়িত্ব পালন করছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্য (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনাকাক্সিক্ষতভাবে কুষ্টিয়া মডেল থানা, সার্কেল অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। লুটপাট হয়ে যায় থানায় রক্ষিত অস্ত্র ও গোলা বারুদ। সেগুলো উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। এ ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি । নির্ভয়ে পুলিশ সদস্যরা কাজে লেগে পড়েছে। পুলিশ জনগনের বন্ধু, প্রতিপক্ষ নয়।
