মোশারফ হোসেন ॥ কুষ্টিয়া কুমারখালীতে ১৪ ও ১৫ আগস্টকে ঘিরে বিএনপির দুই দিনের অবস্থান কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিনে ব্যাপক শোডাউন করেছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। ছাত্রজনতার উপর গুলি চালিয়ে গণহত্যাকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার চেয়ে বিএনপি গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) কুমারখালী শহরে দুপুরে এই অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে।
এতে দীর্ঘ ১৫ বছর আত্মগোপনে থাকা কুমারখালী বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটে। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবছর ১৫ আগস্টকে ঘিরে ব্যাপক সমারোহে শোকদিবস পালন করলেও এবছর তাদের কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আওয়ামী লীগ। অনেক নেতাকর্মী সম্পদের পাহাড় গড়েছে। তবে দলকে সুসংঠিত করতে পারেনি। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরপর আত্মগোপনে রয়েছেন তারা।
১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯ তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে মাঠে পাওয়া যায়নি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মীদের। পালিত হয়নি কোনো কর্মসূচি। এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আসাদুর রহমান আশা ফোনে বলেন, ১৫ আগষ্ট পালন করার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা উচ্ছৃঙ্খল। ভীতি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সেজন্য আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি নেই।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের ১৫ আগষ্টের কর্মসূচি প্রতিহত করতে মাঠে সবর ছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে হামলা, মামলায় জর্জারিত ও আত্মগোপনে থেকেও মেটেনি দলীয় ক্রোন্দল। একই ব্যানারে ত্রি-বিভিক্ত কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। সরেজমিন কুমারখালী পৌর শহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে জেলা বিএনপির সদস্য ও কুমারখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিকের নেতৃত্বে হলবাজার থেকে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি বের করা হয়েছে। আয়োজনে-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, কুমারখালী উপজেলা, পৌর শাখা ও সকল অঙ্গসংগঠন সমূহ। বিক্ষোভ মিছিলটি গণমোড়, থানামোড়, স্টেশন বাজার, বাসস্টান্ডের গোলচত্বর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় হলবাজারে এসে শেষ হয়।
পরে সেখানে এক বক্তব্যে নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিক বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্যাসিবাদী সরকার ও দোষরদের শাস্তির দাবিতে তিনি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। দলের যেকোনো কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি। এরপর বেলা পৌণে ১ টার দিকে রশিদ সুপার মার্কেট এলাকা থেকে পৃথক একটি অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. লুৎফর রহমান। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় এশিউর গ্রুপের মালিক শেখ সাদির পক্ষ থেকে মিছিলটি বের করা হয় বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। এরপর দুপুর একটার দিকে কুমারখালী বাসস্টান্ডের কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী রুমীর পক্ষ থেকে আরো একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁর সমর্থিত নেতাকর্মীরা।
তবে সাবেক এই এমপি মিছিলে ছিলেন না। মিছিলটি স্টেশনবাজার, থানামোড়, গণমোড় হলবাজার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় গোলচত্বর এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক বক্তব্যে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের ১৫ আগষ্ট পালনকে প্রতিহিত করতে মেহেদী রুমীর নেতৃত্বে মাঠে আছি। যতদিন কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুষ্টিয়া ৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী রুমী, সাবেক পৌর মেয়র আনছার প্রামাণিক, এশিউর গ্রুপের মালিক শেখ সাদি ও উপজেলা জামাতের আমির আফজাল হোসাইন।
তবে গ্রুপিং ও দলীয় ক্রোন্দলের বিষয়টি অস্বীকার করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন মনোয়ন পাওয়ার জন্য পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে দলের প্রয়োজনে সবাই এক্যবদ্ধ। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. লুৎফর রহমান বলেন, মনোয়ান প্রত্যাশী অনেকেই থাকতে পারে। তারা পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করতেই পারে। তবে মনোয়ন একজনই পাবেন। যারা প্রকৃত বিএনপি করে, ধানের শীষ করে। তখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হবেন।
