ইবি প্রতিনিধি ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশব্যাপী পুলিশের গুলিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার হওয়া সকল শিক্ষার্থীদের স্মরণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদ জুম্মা দোয়া প্রার্থনা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এসময় মুষলধারে বৃষ্টি হলেও তা উপেক্ষা করেই কর্মসূচি চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার (২ আগষ্ট) জুম্মার নামাজের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচী সফলে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, স্লোগান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সমন্বয়ক, সহ-সমন্বয়কসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চলমান এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। শিক্ষকরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন এবং আল কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই, হল গুলো বন্ধ কেন, প্রশাসন জবাব চাই; আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই; কয় দফা কয় দাবী, নয় দফা নয় দাবী, দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশে রূপ নেয়।
মিছিল শেষে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারাদেশে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুরো জাতি দেখেছে আবু সাঈদকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে অথচ সেখানে নিরপরাধ একজনকে ধরা হয়েছে। স্কুল ড্রেস থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হলে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পাসের ছোট ভাইকে এখানে থাকা অবস্থায় চুয়াডাঙ্গায় নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
এগুলো সরকারের প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়। এসব প্রহসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র সমাজ মাঠে থাকবে। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ বলেন, কোটা আন্দোলনে রাজধানীতে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তখন আমি ঢাকায় ছিলাম। জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির এই কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করছি। মিরপুরে যে হত্যাকান্ড দেখেছি তার বিচার বাংলাদেশে অবশ্যই হওয়া উচিত। আজ শিক্ষকদের একটি মৌন মিছিল আছে সেখানে আমি বক্তব্য রাখবো। আপনাদের যদি শোনার সৌভাগ্য হয় তাহলে শুনবেন সেদিন মিরপুর ১০ নম্বরে কি হয়েছিল, কি ঘটেছিল, কেমন করে ঘটেছিল। কোন প্রেক্ষাপটে ছাত্ররা মেট্রোরেলে উঠেছিল, সেদিন আমি নিজের চোখে দেখেছি। ছাত্রদের এখানে দোষ দেবার কোন সুযোগ নাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমরা এতদিন ধরে যে আশা করছিলাম আমাদের শিক্ষকরা আমাদের এই ন্যায় আন্দোলনে পাশে দাঁড়াবেন সেই আশা পূরণ হয়েছে। স্যার আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করায় স্যারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আবারও জানাচ্ছি আমাদের ভাইদের লাশের ওপর দিয়ে কোন সংলাপ নয়। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
