দৌলতপুরে যুবককে পিটিয়ে হত্যা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

দৌলতপুরে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জুলাই ৫, ২০২৪

দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বাইসাইকেল ও মোবাইল চুরির অভিযোগে আরিফুল ইসলাম (৩০) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিষকুন্ডি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

আরিফুল ইসলাম মহিষকুন্ডি গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান ও প্রাগপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশাফুজ্জামান। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে মহিষকুন্ডি পূর্বপাড়া এলাকার গোলাম ড্রাইভারের বাড়ি থেকে একটি বাই সাইকেল চুরি হয়।

সাইকেল চুরির অভিযোগে চোর সন্দেহে আরিফুল ইসলাম ওরফে বুশকে বুধবার দিবাগত রাতে আটক করে বেধড়ক মারপিট করে গোলাম ড্রাইভারের পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী। একপর্যায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার অভাবে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

তবে নিহত আরিফুল ইসলাম বুশ একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি ছিলেন এবং নেশার টাকার জন্য চুরির সাথেও জড়িত ছিলেন। এই বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত গোলাম আলী আমার  প্রতিবেশী, গত কাল  রাত অনুমানিক তিন টার পরে গোলাম আলীর লোক জন আমিরুল ইসলাম বুশ কে চুরির অপবাদ দিয়ে তার নিজ বাড়ি থেকে ডেকে  নিয়ে এসে গোলাম আলীর বাড়ির ভেতরে গাছে বেঁধে  মারপিট শুরু করলে আমি বুঝতে পারি। পরে আমিরুল ইসলাম বুশ’র ডাক, চিৎকারে আমার বাড়ি থেকে গোলাম আলী ভিতরে যায়। এই ভাবে মারপিট করতে নিষেধ করি।

পরে আমাকে গোলাম আলীর লোকজন বলে আমাদের চুরি হওয়া মালামাল আপনি  দেন তাহলে। না হয় বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি এবং সকাল আনুমানিক আটটার পরে গোলাম আলীর বাড়িতে বুশ মৃত্য বরণ করে। নিহতের বড় ভাই আশরাফুল বলেন, ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ির সবার সামনে ভাইকে ডেকে নিয়ে গেল। তারা যে হত্যা করবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। তারা চুরির কথা বলছে, কিন্তু চুরির কোনো মালামাল আমাদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

আমরা এই হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। আশরাফুল বলেন, ভাইয়ের লাশ নিতে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে এসেছি। দাফন শেষে মামলা করবেন বলে জানান তিনি। এই বিষয়ে নিহত যুবকের পিতা গোলাম মোস্তফা  ও মাতা ছানোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে আরিফুল ইসলাম বুশকে একই গ্রামের গোলাম আলী , মোস্তফা, মিঠন হোসেন, সহ আরও অনেকে বুধবার দিন গত রাত অনুমানিক তিন টার পরে আমার নিজা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়।

পরে আমার ছেলেকে গাছে বেঁধে  মারপিট করে।  আমার ছেলেকে রাত ভোর গোলাম আলীর বাড়ির ভেতরে  গাছে বেঁধে   অমানবিক নির্যাতন করে।  আমার ছেলে বৃহস্পতিবার  বেলা অনুমানিক নয়টার দিকে গোলামের বাড়ির ভেতরে মারা যায়। তারা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা আমার ছেলেকে জীবিত উদ্ধার করতে পারি নাই।

এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি আমরা। প্রাগপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশাফুজ্জামান বলেন, মোবাইল ও বাইসাইকেল চুরির অভিযোগে আরিফুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে। ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো। বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, চোর সন্দেহে ওই যুবককে মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসীন আল মুরাদ বলেন, আমরা লাশ উদ্ধার করেছি, আইনানুগ সকল পদক্ষেপ চলছে।