নিজ সংবাদ ॥ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুড়িয়া (এন-৭০৪) জাতীয় মহাসড়কে ৫১+০০০ কিঃ মিঃ হতে ৬২+৮০০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাল ও প্রশস্তকরণ কাজে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ সালে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের অধীনে চুক্তি ভিত্তিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী এক শত ৪৭কোটি ২৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৪ টাকা বরাদ্দে ২৬ অক্টোবর ২০২১ কাজ শুরু হয়। যার চুক্তি নং ব-এচ-২৪ (অঈঊ কযঁ উবা/২০১৯-২০ (ডও)-০৫), (টেন্ডার ১১) নং ৫০৪৯৮২)। কাজ হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম এবং ধীর গতির মধ্যে দিয়ে কাজ করতে থাকে চুক্তি ভিত্তিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এতে রাস্তার পাশে বসবাসরত সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র এবং রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ পড়ে সীমাহীন বিড়ম্বনায়। রাস্তা পুনঃনির্মাল ও প্রশস্তকরণ কাজের দীর্ঘ মেয়াদের কারণে ঐ রাস্তার দুই পাশে বসবাসরত মানুষের বাড়ী-ঘর সব সময় ধূলায় আচ্ছন্ন থাকে। দিনে এবং রাতে খাওয়ার সময়ও ধূলোবালির হাত থেকে রক্ষা পায় না ঐ এলাকার মানুষ। প্রায় সময়ই খাবারের মধ্যে ধূলোবালি জমা হয়। এছাড়াও বাড়িঘরের বিছানাপত্র থেকে শুরু করে দৈনন্দিত ব্যবহার্য জিনিস পত্রও ধূলোবালিতে একাকার হয়ে থাকে। এ এলাকার স্কুল-কলেজ গামী ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যাওয়া ও আসার সময় ধূলোবালি কারণে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রায় সময়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদের। অন্যদিকে ঐ রাস্তার পাশে অবস্থিত বাজার ও দোকানপাট সব সময় ধূলোবালিতে ভরে থাকে। যার ফলে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। একই অবস্থা ঐ রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের। কিন্তু এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের কোন রাস্তা জানা নেই তাদের। অঅর বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগও নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে দীর্ঘ দিন। যার ফলে ঐ এলাকায় বসবাসরত সাধরণ মানুষের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। এই অবস্থা যে কোন উপায়ে পরিত্রান চান সড়কে চলাচল সাধরণ মানুষ ও এলাকার বাসিন্দারা। যদিও চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় ছিলো। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড সময় মতো কাজ শেষ না করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়। কিন্তু বর্তমানে কাজের যে অগ্রগতি তাতে আগামী ৩০ জুন এর মধ্যে বাকী কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে কোন সৎ উত্তর নেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এম এম বিল্ডার্স। উল্টো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর বিরুদ্ধে রাস্তা থেকে মাটি কেটে মাঠে বিক্রয়, কাজে বিভিন্ন অনিয়ম, পুরাতন পাথর এবং নিম্নমানের ইট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। দেশে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ বা সংস্কারে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। কেবল কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কই নয়, দেশের আরো অনেক সড়ক-মহাসড়কই রয়েছে বেহাল অবস্থায়। যে কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, যানবাহন বিকল হয় এবং তৈরি হয় যানজট। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে সড়ক নির্মাণের ব্যয় অনেক দেশের তুলনায় বেশি। গণমাধ্যমে এ নিয়ে অতীতে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। অথচ জনগণের কর এর টাকায় সড়কগুলো নির্মাণের পর টেকসই না হাওয়ার প্রশ্ন রয়েছে সর্বত্র। নির্মাণের পর দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক মেয়াদ পূর্ণ করতে পারছে না। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সড়ক নির্মাণের পর বছর না ঘুরতেই ভেঙে যায়। আর এই অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ভাঙা সড়ক সংস্কার বা পুনঃর্নিমাণের জন্য আবার টেন্ডার ও আবার কাজই যেন নিয়ম। কোন ভাবেই এই সকল দুষ্টচক্রের ফাঁদ থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না সহজে। সড়ক নির্মাণ বা সংস্কারে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয় তার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সড়ক খাত অনিয়ম-দুর্নীতির একটি বড় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ঘোড়ামারা বাসিন্দা মোঃ এলাহী বলেন, এই রাস্তা যেভাবে নির্মাণ হচ্ছে তাতে আগামী এক বছরের মধ্যে আবার নষ্ট হয়ে যাবে। এই রাস্তা থেকে যে পুরাতন ইট আর পাথর তুলেছে সেগুলো তারা ড্রাম ট্রাকে করে তাদের ইয়ার্ডে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেগুলো আবার এই রাস্তা নির্মাণ ব্যবহার করছে। নাওদা খাদিমপুরের বাসিন্দা মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক নির্মাণে ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড-এ যে সমস্ত কর্মীরা এখানে কাজে নিয়োজিত আছে তারা বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত আছে। রাস্তা নির্মাণে পাইলিং করা সময় তারা রাস্তার মাটি বিক্রয় করছে গোপনে। বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ নাসির আলী বলেন, পূর্ণঃনির্মাণ ও প্রশস্তকরণে সম্পূর্ণ রাস্তায় ৫ ফিট গর্ত করে তার মধ্যে বালি ভরাট করার কথা থাকলেও আমাদের এখানে শুধুমাত্র রাস্তার দুই পাশে তিন ফিট করে গর্ত করে তার মধ্যে বালি দিয়ে পূর্ণ করে রাস্তার কাজ শেষ করে গেছে। আর এই অনিয়ম মধ্যে দিয়া রাস্তা নির্মাণ করলে রাস্তা আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যাবে। কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে রাস্তায় চলাচলকারী বাস চালক মোঃ তারেক উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তায় গাড়ী চালায়, এই রাস্তা নির্মাণের আগে আমরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। ভাঙ্গা রাস্তায় যখন আমরা গাড়ি চালাতাম তখন গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হতো, ভেঙে যেতো। এমনও হয়েছে গাড়ির এক্সেল ভেঙে রাস্তার মাঝখানে বসে ছিলাম ঘন্টার পর ঘন্টা। কিন্তু বর্তমানে এই রাস্তা যেভাবে পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্তকরণ হচ্ছে তা দেখে আমার মনে হচ্ছে আগামী দুই এক বছর আমাদের আবার সেই দুর্ভোগের শিকার হতে হবে। অনিয়মের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ রাহাত হোসেন এর সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহাসড়ক নির্মাণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মচারী বিরুদ্ধে কোন অনিয়মের বা কারচুপি অভিযোগ পেলে আমার অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এই বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী লিটন আহমেদ খান’র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নাই।
