ক্রীড়া ডেস্ক \\ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওপেনারদের কাজ কী? হয় ঝুঁকি নিয়ে পাওয়ারপ্লেতে ঝোড়ো শুরু এনে দেবে। অথবা উইকেট বাঁচিয়ে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য মঞ্চ তৈরি করবে। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ওপেনাররা কী করেন? সরাসরি উত্তর আশা না করাই ভালো। কারণ, এর উত্তর বাংলাদেশ দলের কাছেও নেই। যদি থাকত, গত দুই বছরে টি-টোয়েন্টিতে ১৩টি ওপেনিং জুটি নিশ্চয়ই দেখা যেত না। তা উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত যে পরীক্ষা-নীরিক্ষা, এর ফল কী? আপাতদৃষ্টে নতুন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কারণ, বিস্তর গবেষণা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আবার টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দল তাদের সেই ‘স্বপ্নের’ সৌম্য সরকার–লিটন দাস জুটিতেই ফিরেছে। স্বপ্নের? হ্যাঁ, সে তো বটেই। একটা সময় তো সৌম্য–লিটন ওপেনিং জুটি নিয়ে বড় আর বিশেষ স্বপ্নই দেখেছে বাংলাদেশ দল। সৌম্য আর লিটনের বড় বড় ছক্কা, সহজাত স্ট্রোক প্লে টিম ম্যানেজমেন্টকে এটা ভাবতে বাধ্য করেছিল যে চার–ছক্কার টি-টোয়েন্টিতে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে তাঁদের চেয়ে ভালো বিকল্প আর কতজন আছেন! এটা ঠিক যে এ দুজন একসঙ্গে সেই স্বপ্নের পূর্ণতা দিতে পারেননি। তবে আলাদা আলাদা করে তাঁদের ব্যাট আর বলের ঘর্ষণ বা সংযোগে আলোর বিচ্ছুরণ ঠিকই হয়েছে। সে কারণেই তো স্বপ্ন দেখা। স্বপ্ন ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। তবে স্বপ্ন যে পূরণ হলো না, এর দায় কি সৌম্য–লিটন জুটিকে দেওয়া যায়? এ প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে একটা পরিসংখ্যানে তাকাতে হয় স্বপ্নের এই জুটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবারের সিরিজে প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে কতবার ইনিংস ওপেন করেছে, জানেন? মাত্র দুইবার! প্রথমবার ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। প্রথম পরীক্ষায় এসেছিল ২০ বলে ২৬ রান। ভালো শুরু? লক্ষ্য ছিল ১৪৫ রানের, এটাকে ভালো শুরু বলবেন কি না, সে ভার ব্যক্তির ওপরই থাকল। তবে বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে হওয়া সেই ত্রিদেশীয় সিরিজের পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লিটনের সঙ্গে ওপেন করেন মুশফিকুর রহিম। সৌম্য ব্যাটিংয়ে আসেন ৫ নম্বরে, আউট হন প্রথম বলেই। কাকতাল হলো, লিটনও সেদিন ফেরেন কোনো রান না করে। লিটন-সৌম্যকে আবার একসঙ্গে ওপেনিংয়ে দেখা যায় দুই বছর পর, ২০২১ সালের অক্টোবরে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। দুজনেই আউট হন ৫ রান করে, জুটি থেকে আসে মাত্র ৮। এরপর আবার প্রায় ৩ বছরের অপেক্ষা, অর্থাৎ চলতি সিরিজ পর্যন্ত। সেটাও অনেকটা চমকে দিয়ে। শোনা গেছে, মিডল অর্ডারে খেলানোর জন্যই দলে নেওয়া হয়েছিল সৌম্যকে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সৌম্য–লিটন ওপেন করেছেন মাত্র ৪ ম্যাচে। বাংলাদেশের হয়ে এর চেয়ে বেশিবার ওপেন করেছ আরও ১১টি জুটি। এ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, সৌম্য-লিটনের ‘হাইরিস্ক গেম’এ আগের টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা রাখতে পারেননি। তবে বাংলাদেশ দলের বর্তমান প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ভরসা রাখছেন। রাখতে চাইছেন। সে কারণেই তো প্রথম ম্যাচে সৌম্যলিটন জুটির ব্যর্থতার পর স্কোয়াডে আরও দুই ওপেনার থাকলেও দ্বিতীয় ম্যাচে এই দুজনকে দিয়েই ইনিংস ওপেন করিয়েছেন। এই ‘ধৈর্য’ কাজেও লেগেছে। সৌম্য নিজের সেরাটা দিতে পারেনি এ ম্যাচে। করেছেন ২২ বলে ২৬ রান। কিন্তু জুটি থেকে এসেছে ৪১ বলে ৬৮। ১৬৬ রানের লক্ষ্য সিলেটের উইকেটে যখন ওপেনিং জুটিতেই দ্রত ৬৮ রান চলে আসে, বাকি ব্যাটসম্যানদের কাজটা অনেকটা ‘পার্কে হাটার মতো’ হয়ে যায়। বড় ভুল না করলে বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
