
নিজ সংবাদ ॥ গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। এই মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল নির্মিত হওয়ায় বহুমুখী সুফল ভোগ করবে এই অঞ্চলের মানুষ। শুধু স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন হবে তা নয়, এই মেডিকেল কলেজ পূরণ করবে এই এলাকার শতশত শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন। আবার মেডিকেল কলেজের সঙ্গেই নির্মিত ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির কারণে এই এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়াসহ আশেপাশের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা এবং রাজবাড়ী জেলা মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা একমাত্র জায়গা ছিলে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনানেল হাসপাতাল। যার ফলে এই হাসপাতালে সবসময় রোগীর চাপ লেগেই থাকে। এমনকি হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী প্রায় সময় এখানে চিকিৎসা সেবা নেয়। এতে করে হাসপাতালের যেমন জায়গার সংকট দেখা দেয় তেমনি দেখা দেয় জনবল সংকট। এসব সংকট নিরশন করার লক্ষ্যে এবং কুষ্টিয়াসহ আশপাশের পাঁচ জেলার মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২০১২ সালের ৩ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের। পরে ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল চালু ছাড়াই অস্থায়ী ভবন থেকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয় মেডিকেল কলেজ। যা এখন পুরোপুরি চলমান। একইসঙ্গে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন প্রায় ২০ একর জমির ওপর নির্মিত এই মেডিকেল কলেজের সঙ্গেই নির্মাণ হচ্ছে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল। এরইমধ্যে হাসপাতালের আংশিক চিকিৎসা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। বহিঃবিভাগ থেকে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত এই মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল পুরোদমে চালু হলে, জেলা স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল পুরোপুরি চালু হলে চিকিৎসাসেবা ক্ষেত্রে যেমন নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে তেমনি কম খরচে এখান থেকে অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে উন্নত সেবা পাওয়া যাবে। এদিকে, এরইমধ্যে কলেজ ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে মার্কেট, যেখানে ওষুধের দোকানের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, খাবার হোটেল, ক্যাফেসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আবার বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা রোড এবং এর পাশের হাউজিং এলাকার জমির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। পাশাপাশি বেড়েছে বাসা ভাড়া। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, এখানে বর্তমানে মোট ৩২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। লেখাপড়ার জন্য মনোরম পরিবেশ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে অভিজ্ঞ শিক্ষক এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ। যার ফলে প্রতিবছর সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক হয়ে বের হচ্ছে। সচেতন নাগরিক কমিটি কুষ্টিয়ার সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কুষ্টিয়া জেলার মানুষের একটি স্বপ্ন পূরণ। এখান থেকে একদিকে যেমন মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবে। অন্যদিকে এই মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল কেন্দ্রিক গড়ে উঠবে নানামুখি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। যা কুষ্টিয়াকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।এসব বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, এই সরকারের আমলে দেশের অনেক মেগা প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে। সেই মেঘা প্রকল্পের সুফল মানুষ ভোগ করছে। তারই অংশ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল। যে এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি নির্মিত হলো সেটি ছিলে শহরের একপাশে। সেখানে গড়ে উঠছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ কাজের সুযোগ পাবে। এক কথায় এই প্রকল্পের বহুমুখী সুবিধা পাবে কুষ্টিয়াবাসী।
