কুমারখালীতে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন সংকটাপন্ন - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুমারখালীতে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন সংকটাপন্ন

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ২০, ২০২৩
কুমারখালীতে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন সংকটাপন্ন

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যক্তিকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ঐ হাতুড়ে চিকিৎসকের নাম ডা: এইচ এম আব্দুল মোমিন।

কুমারখালীতে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন সংকটাপন্ন

কুমারখালীতে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন সংকটাপন্ন

কুমারখালীতে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন সংকটাপন্ন

ভুক্তভোগী গোলাম মোস্তফার ছেলে হাসমত আলী অভিযোগ করেছেন, কয়েক মাস আগে বরইচারা গ্রামের গ্রাম্য চিকিৎসক ডা: এইচ এম আব্দুল মোমিন ভুক্তভোগী গোলাম মোস্তফার গলার নিচে টিউমারের চিকিৎসার জন্য বেশকিছু ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসা পত্রে। এসময় মুখে খাওয়ার ওষুধের পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক এক ধরনের অয়েনমেন্ট ক্ষতস্থানে লাগানোর জন্য দেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আয়ুর্বেদিক অয়েনমেন্ট লাগানোর দুই থেকে তিন দিন পর টিউমারের স্থান ফুলে উঠে এবং প্রচন্ড যন্ত্রনা শুরু হয়। এসময় ডা: এইচ এম আব্দুল মোমিন নিজ চেম্বারে টিউমারটি কেটে অপসারন করার চেষ্টা করেন। ফলে প্রচুর রক্তক্ষরন হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠিয়ে দেন।

 

ভুক্তভোগী গোলাম মোস্তফার ছেলে হাসমত আলী অভিযোগ করে বলেন, নামধারী ওই চিকিৎসকের অজ্ঞতার কারনে আমার বাবা আজ মৃত্যুর সাথে পাঁঞ্জা লড়ছে। কয়েক মাস ধরে আমার বাবাকে ঢাকার বড় বড় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরেও এখনও পূরোপুরি সুস্থ হয়নি। হাসমত আলীর অভিযোগ, কথিত ডা: এইচ এম আব্দুল মোমিন নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার কারনে কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের অনেকেই চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে তার কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। আমার বাবাও সেভাবেই তার কাছে যান। তিনি আসলে কোন চিকিৎসক নন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার অপচিকিৎসার বিষয়টি বুঝতে পেরে আমার বাবাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি এই ভূয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। সেই অভিযোগের এখনও কোন নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা গরীব মানুষ। ভূয়া চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশনের ভুল চিকিৎসায় আমার বাবার জীবন এখন সংকটাপন্ন। সে যে চিকিৎসা দিয়েছিলো তার হাতের লেখা চিকিৎসাপত্র আমার কাছে আছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে আমরা আর্থিকভাকে চরম সংকটের মধ্যে জীবনযাপন করছি।

হাসমত আলী বলেন, সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে আমার আকুল আবেদন গ্রামের অসহায় মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে চিকিৎসক পরিচয়ে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই কথিত চিকিৎসক ডা: এইচ এম আব্দুল মোমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আংশিক অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন, গোলাম মোস্তফা নামের ওই ব্যক্তি আমার কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। আমি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বড় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলেছি। কিন্তু গোলাম মোস্তফা আমাকে বার বার অনুরোধ করায় আমি তাকে ইউনানী এক ধরনের ক্রীম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে ছিলাম। আমি আর কোন ওষুধ তাকে সেবন করতে বা ক্ষতস্থানে লাগানোর পরামর্শ দেইনি। আমার কাছে আসার বেশ কয়েকদিন পরে হঠাৎ লোকজন নিয়ে তিনি দাবি করেন আমি তাকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে হয়রানী করছি।

ইউনানী ক্রীম ছাড়াও আপনি আরও বেশ কয়েকটি ওষুধ ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসাপত্রে দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না তাকে কোন চিকিৎসাপত্র দিয়েছি কি না। নামের আগে ডাঃ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন কি না এবং চিকিৎসা দেওয়ার কোন অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে এইচ এম আব্দুল মোমিন বলেন, আমি ইউনানী, আয়ুরবেদিক ও হোমিওপ্যাথী কোর্স শেষ করেছি, আমি আমার নামের আগে চিকিৎসক ব্যবহার করতে পারি।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই ধরনের অপচিকিৎসার বিষয়টি নতুন নয়। জেলাব্যাপী বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় এই ধরনের প্রতারকদের দ্বারা সাধারণ মানুষ বেশি প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। তবে এই বিষয়টি আমার জানা নেই। উপযুক্ত তথ্য উপাত্তসহ ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে ছিলেন এইচ এম আব্দুল মোমিন। কিছুদিন আগে এলাকায় এসে তিনি নিজেকে চিকিৎসক দাবি করে মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। সে কোথায় পড়াশোনা করেছে বা আদৌ সে চিকিৎসক কি না তা আমাদের জানা নেই। এলাকাবাসীর দাবি এইচ এম আব্দুল মোমিনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ আমলে নিয়ে সঠিক তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এইচ এম আব্দুল মোমিন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের মৃত আজাহার মোল্লার ছেলে। তিনি একই এলাকায় ন্যাচারাল হেলথ কেয়ার সেন্টার নামে একটি চেম্বারে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।