আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হচ্ছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের এক অংশের স্বাস্থ্য সেবা
নানান জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ (কুষমেক) হাসপাতালে বহির্বিভাগের একটি অংশের স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হচ্ছে। সকাল ১০ টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হচ্ছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের এক অংশের স্বাস্থ্য সেবা
উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাস প্রান্তে উপস্থিত থাকবেন কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আ. কা. ম সরোয়ার জাহান বাদশা এবং কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সূত্র মতে, মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হলেও বরিবার (১২ নভেম্বর) থেকে বহির্বিভাগে স্বাস্থ্য সেবা চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া যাবে। রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বহির্বিভাগে ৩৭৯ জন রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন। যার মধ্যে রবিবার (১২ নভেম্বর) ১৫৪ জন এবং সোমবার (১৩ নভেম্বর) ২২৫ জন। বহির্বিভাগে ১২ থেকে ১৫ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তবে বহির্বিভাগ চালু হলেও ইমারজেন্সী এবং ইনডোর সেবা এখন চালু হয়নি। যে কোন রোগী মাত্র দশ টাকার টিকিটের বিনিময়ে বহির্বিভাগ থেকে স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারবে। সেই সাথে ১৭ প্রকার সরকারী ওষুধ ফ্রি’তে পাওয়া যাবে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দশ টাকা দিয়ে টিকেট কারার প্রয়োজন হবে না।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতার সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিভাগে স্বাস্থ্য সেবা চালু হলেও রোগীরা আপতত রোগ নির্নয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে পাবরে না। তবে সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে অল্প কিছু দিনের মধ্যে সকল প্রকার ব্লাড টেস্ট, সিটি স্ক্যান, এম আর আই, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি এবং এক্সেরের মত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করাতে পাবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই সকল পরীক্ষা জন্য কোন টাকা দিতে হবে না।
কুষ্টিয়া পৌরসভার চৌড়হাস থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বাপ্পিজা বলেন, হাসাপাতাল চালু হাওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। এখানকার ডাক্তার ও নার্স সহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অত্যন্ত আন্তরিক। উন্নত চিকিৎসা সেবা পেয়ে আমরা খুশি। হাউজিং সি-ব্লক থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বিলকিছ বলেন, ডাক্তার ও নার্স সহ সকলের ব্যবহার এখন তো ভালোই মনে হচ্ছে। পরে কি হবে কে জানে।
চিকিৎসা সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবু হোসেন জানান, সার্বিক সেবার মান অত্যন্ত ভালো হবে। ইতিমধ্যে হরমোন’র মত ব্যয়বহুল পরীক্ষা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা হচ্ছে। বাকী পরীক্ষা গুলো অচিরেই শুরু করা হবে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ মাসুদ রানা জানান, আপাতত বহির্বিভাগের এক অংশ চালু করা হয়েছে এবং মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী, আয়ুর্বেদিক ও চর্ম রোগের চিকিৎসা দেওয়া হবে। ইমারজেন্সী ও ইনডোর সেবা এখনও চালু হয় নাই। পর্যায়ক্রমে বিল্ডিং হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হতে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস লেগে যেতে পারে। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ পর্যন্ত সিডিউল টাইম।
এছাড়াও আউট সোর্সিং লোকবল সহ ডাক্তার ও নার্স নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদ লাগবে। উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছয় জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। এটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ সময় নির্ধারণ হয়েছে। ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হলেও বর্তমানে এর বায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮২ কোটি টাকা। তবে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের পাশে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ২০২১ সাল থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সাত তলাবিশিষ্ট ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির এখনো অনেক কাজ বাকি। তাই কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করা হয় এর বহির্বিভাগের একটি অংশ চালু করার। জুন মাস থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত কয়েকবার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণের পর অবশেষে ১৪ নভেম্বর চূড়ান্ত হয়েছে উদ্বোধনের তারিখ। এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকে নানা জটিলতা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে শ্রমিকের মৃত্যু হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইএমইডি শক্তিশালী তদন্ত দল কুষ্টিয়া এসে তদন্তে নানা অনিয়ম দেখতে পায়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া গাইডলাইন মোতাবেক এখানে কাজ হয়েছে। ছয়টি ব্লকের হাসপাতাল চতুরের কাজ প্রায় শেষের দিকে বললেন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত অক্টোবরে হাসপাতালের বহির্বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি অংশের কাজ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এদিকে ২০১৪ সালের দরপত্রে প্রায় ৭০ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব এমআরআই, সিটিস্ক্যান, অত্যাধুনিক সিআর্ম এক্সরে এবং জীবাণুমুক্তকরণ অটোক্লেভ মেশিনসহ ওয়ার্ড ও কেবিনের শয্যা, ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, সিসিইউ-আইসিইউসহ বিভিন্ন বিভাগের সরঞ্জাম জায়গা মতো বসানো যায়নি। প্রায় শতকোটি টাকার মালামাল বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার মুশফিকুর রহমান বলেন, সার্ভে করার পর এসব মালামাল আমার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব কক্ষে এসব বসানো হবে তা এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় মালামালগুলো ওভাবেই পড়ে আছে।
