Rajakar, রাজাকার
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ, কুমারখালীতে প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়, যা স্বাধীনতার প্রতি এই অঞ্চলের জনগণের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

১৯৭১ সালের ৬ আগস্ট, মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় এক রাজাকারের বাড়ি আক্রমণ করলে সংঘর্ষে বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধকালীন সময়ে কুমারখালী থানার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী লড়াই হয়। বহু রাজাকারও নিহত হয় এসব লড়াইয়ে।
অবশেষে, ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর কুমারখালী উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

তালিকাটি “রাজাকার ও দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের তালিকা (ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত)” বই থেকে সংগৃহীত। এতে কুমারখালী থানার অন্তর্ভুক্ত রাজাকার ও দালালদের নাম, ঠিকানা ও গ্রেফতারের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
| ক্র. | নাম | পিতার নাম | পেশা | তৎকালীন ঠিকানা | আটকের তারিখ | অভিযোগ |
| ১ | ফকরুদ্দিন | আফজাল | ব্যবসা | কুমারখালী, কুষ্টিয়া | ডিসেম্বর ‘৭১ | দালাল |
| ২ | ফজলার রহমান | আফজাল | মিল শ্রমিক | কুমারখালী, কুষ্টিয়া | ডিসেম্বর ‘৭১ | দালাল |
| ৩ | মোঃ জামালুদ্দিন | মোঃ হোসেন | প্রাইভেট চাকরি | কুমারখালী, কুষ্টিয়া | ডিসেম্বর ‘৭১ | দালাল |
| ৪ | মোঃ সাদিক | সমর মিয়া | ব্যবসা | কুমারখালী, কুষ্টিয়া | ডিসেম্বর ‘৭১ | দালাল |
| ৫ | সাহেবুদ্দিন গাইন | মইনুদ্দিন | – | বানিয়াপাড়া, কুমারখালী | জানুয়ারি ‘৭২ | দালাল |
| ৬ | উকিল আলী প্রামাণিক | জতু প্রামাণিক | – | বানিয়াপাড়া, কুমারখালী | জানুয়ারি ‘৭২ | দালাল |
| ৭ | আইজুদ্দিন | বাণ্ড শেখ | – | জোতপাড়া, কুমারখালী | জানুয়ারি ‘৭২ | দালাল |
| ৮ | হাশিম আলী | আবু তালেব | বৈদ্যুতিক কর্মী | কয়া, কুমারখালী | ডিসেম্বর ‘৭১ | দালাল |
| ৯ | রজব আলী | খাইবার আলী | – | পিতম্বরবাশি, কুমারখালী | ডিসেম্বর ‘৭১ | রাজাকার |
| ১০ | ইবাদত আলী | বাহালুদ্দিন | – | চাপাইগসি, কুমারখালী | ডিসেম্বর ‘৭১ | রাজাকার |
| ১১ | শামসুদ্দিন | সদরুদ্দিন | – | কসবা, কুমারখালী | ডিসেম্বর ‘৭১ | রাজাকার |
| ১২ | এম এ রউফ | মাজাহারুল ইসলাম | – | জাদপুর, কুমারখালী | ডিসেম্বর ‘৭১ | রাজাকার |
| ১৩ | মোঃ আবদুল কাইয়ুম (এডভোকেট, সিএমএল এমপিএ) | সাইদ মোহাম্মদ | – | দুদরুমড়া, কুমারখালী | ফেব্রুয়ারি ‘৭২ | দালাল |
| ১৪ | ডা. মুনসের আলী | ফকরুদ্দিন | – | কুমারখালী | ডিসেম্বর ‘৭১ | দালাল |
| ১৫ | মুকসেদ আলী | বিশু মালিথা | – | জয়নাবাদ, কুমারখালী | ডিসেম্বর ‘৭১ | দালাল |
| ১৬ | কেরামত আলী | ওয়াহিদ আলী | – | কোট্টিয়া, কুমারখালী | ডিসেম্বর ‘৭১ | রাজাকার |
এই তালিকা ইতিহাসের এক মর্মন্তুদ অধ্যায়ের দলিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যারা মানবতা ও দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজাকার, আলবদর কিংবা দালালের ভূমিকা পালন করেছিল, তাদের চিহ্নিত করে ইতিহাসের কাঠগড়ায় তোলা ছিল সময়ের দাবি। কুমারখালীর সাধারণ মানুষের সাহসিকতা, প্রতিরোধ এবং সংগ্রাম ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধ শুধুই একটি যুদ্ধ ছিল না, ছিল নৈতিকতা ও মানবতাবোধের পক্ষে এক চূড়ান্ত আত্মত্যাগের গল্প। সেই গল্প আজও বয়ে বেড়ায় কুমারখালীর প্রতিটি মাটি ও মানুষের মুখে মুখে।
📌 এই দলিলটি ইতিহাসচর্চা, গবেষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংরক্ষণ ও শেয়ার করুন—তরুণ প্রজন্মের কাছে সত্য পৌঁছে দিতে।
[তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গ্রন্থ ‘রাজাকার ও দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের তালিকা (১৯৭১-৭২)’ – বাংলাদেশ সরকার প্রকাশিত নথিপত্র ও গবেষণা উপাত্ত থেকে প্রাপ্ত]
