Tomb Lalon, Source - Md. Saiful Aziz Shamseer, his file is licensed under the Creative Commons Attribution-Share Alike 3.0 license.
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কুষ্টিয়া জেলা ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, সাহিত্য-সংস্কৃতির সমৃদ্ধ পটভূমি এবং মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্য কুষ্টিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের ধারায় এক বিশেষ পরিচয় লাভ করেছে। কিন্তু কুষ্টিয়া নামের উৎপত্তি বা ব্যুৎপত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাসবিদ, গবেষক ও ভাষাতাত্ত্বিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এই প্রবন্ধে কুষ্টিয়া নামকরণের সম্ভাব্য উৎস, প্রচলিত মতামত এবং পুরোনো দলিলাদি অনুসারে নামের বিবর্তন বিশ্লেষণ করা হলো।

কুষ্টিয়া নামটি কোথা থেকে এলো—এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর পাওয়া না গেলেও প্রাচীন দলিল, উপনিবেশিক রেকর্ড, লোকজ ব্যাখ্যা ও ভাষাতাত্ত্বিক সূত্র মিলিয়ে কয়েকটি সম্ভাব্য উৎস পাওয়া যায়। নামকরণের ইতিহাস বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করলে কেবল এক অঞ্চলের নামের উৎপত্তিই নয়, বরং অঞ্চলের ভাষা, অর্থনীতি, বাণিজ্য, শাসনব্যবস্থা এবং সামাজিক বাস্তবতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে কুষ্টিয়া নামকরণকে বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে অঞ্চলটির নাম ইতিহাস ও ভাষার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বহু পর্যায় অতিক্রম করেছে।
উপনিবেশিক আমলের উল্লেখযোগ্য দলিল Hamilton’s Gazetteer–এ কুষ্টিয়া নামকরণের সবচেয়ে সমর্থিত তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়:
বাংলা ভাষায় নাম গঠনের কয়েকটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে—
এই নিয়ম অনুযায়ী “কুষ্টি → কুষ্টিয়া” ব্যাখ্যাটি সবচেয়ে ভাষাবৈজ্ঞানিকভাবে গ্রহণযোগ্য।
মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে ফারসি ছিল প্রশাসনিক ও সাহিত্যিক ভাষা।
ধারণা করা হয়—
এই ব্যাখ্যাটি ভাষাগতভাবে সম্ভাব্য হলেও ঐতিহাসিক প্রমাণ তুলনামূলক দুর্বল।
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে (১৬২৮–১৬৫৮)
কুষ্টিয়া অঞ্চলে গড়ে ওঠে একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর—
“কুষ্টি বন্দর”
পদ্মা, গড়াই ও কুমার নদীর সংযোগস্থলের কারণে এই বন্দর—
বন্দরকে ঘিরে ধীরে ধীরে জনবসতি বৃদ্ধি পেয়ে ‘কুষ্টি’ নামটি অঞ্চল–পরিচয়ে পরিণত হয়। পরে এ নাম রূপান্তরিত হয়ে কুষ্টিয়া হয়।
অঞ্চলে ‘কোশ্ঠী/কোস্তা’ নামে কোনো নৃগোষ্ঠীর বসতি ছিল—এমন মতও প্রচলিত। তবে এ তথ্যের পক্ষে প্রাচীন দলিল দুর্লভ।
কিছু গবেষক কুষ্টিয়ার নামকে ‘কোস্টগড়’ বা ‘কোষ্ঠগড়’ নামক পুরনো দুর্গ বা বাজারের সঙ্গে যুক্ত করেন। কিন্তু এ ব্যাখ্যারও শক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক ভিত্তি নেই।
যদিও কুষ্টিয়া নামের বিষয়ে চূড়ান্ত দলিল নেই, তবু ঐতিহাসিক প্রমাণ, ভাষার নিয়ম, এবং উপনিবেশ আমলের নথির ভিত্তিতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো—
➡ পাটের স্থানীয় নাম “কুষ্টি” থেকেই “কুষ্টিয়া” নামের উৎপত্তি
ফারসি ও মুঘল–ভিত্তিক ব্যাখ্যাগুলো সাংস্কৃতিক প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে, তবে ঐতিহাসিকভাবে তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
আজকের কুষ্টিয়া শুধু একটি জেলা নয়—
সব মিলিয়ে কুষ্টিয়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আত্মার এক অনন্য প্রতীক। নামটি যেখান থেকেই আসুক না কেন, “কুষ্টিয়া” এখন প্রতিষ্ঠিত— সংস্কৃতি, মানবধর্ম, সাহিত্য, ইতিহাস ও মুক্তচিন্তার এক চিরস্থায়ী অধ্যায়ের প্রতীক হিসেবে।
