ভেড়ামারায় এক মাসেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত স্কুল ছাত্রী
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে প্রকাশ্য দিনে-দুপুরে বাড়ির সামনে থেকে স্কুলছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া সোহা (১৬) অপহরনের ঘটনা এক মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। একমাত্র সন্তানকে উদ্ধার করতে না পেরে মৃত্যুশয্যায় স্কুলছাত্রীর মা হ্যাপি খাতুন।

ভেড়ামারায় এক মাসেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত স্কুল ছাত্রী
অপহৃত ওই স্কুল ছাত্রী ভেড়ামারা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের প্রবাসী জাকারিয়া হোসাইন সুজনের কন্যা। অপহরনের ঘটনায় ভেড়ামারা থানায় মামলা হলেও এই ঘটনার সাথে জড়িত কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সন্দেহমূলে একজনকে আটক করা হলেও তার কাছে থেকে কোন তথ্য মিলেনি।
অপহরণের শিকার ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ভেড়ামারা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের আব্দুল হালিম সর্দারের ছেলে মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দার দীর্ঘদিন ধরে ওই স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতো। এর ধারাবাহিকতায় গত জুন মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বাড়ির সামনে রাস্তায় হাটাহাটি করার সময় একই গ্রামের আব্দুল হালিম সর্দারের ছেলে মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দার কয়েকজন সহযোগীসহ একটি মাইক্রোবাসে ওই স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। স্কুলছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া সোহার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন বিষয়টি জানতে পেরে মাইক্রোবাসটিকে ধাওয়া দিয়েও আটক করা সম্ভভ হয়নি। এই ঘটনায় ভেড়ামারা থানায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এবং অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় ঘটনার পর থেকে ওই স্কুলছাত্রীর মা পাগল প্রায়। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। অপহরণের শিকার ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, অভিযুক্ত পারভেজ আলী সর্দার এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।
অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দার মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ায় পরিবারের আশংকা ওই স্কুলছাত্রীকে মেরে ফেলা বা তার সাথে খারাপ কিছু ঘটিয়েয়ে থাকতে পারে অভিযুক্তরা। ওই স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেই ক্ষান্ত হয়নি অভিযুক্তরা, অব্যাহতভাবে ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবারকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগসহ হুমকী-ধামকী দিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের আরও অভিযোগ, মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দার ওই স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর তার চাচা একরামুল হক ডালিমের ইন্দোনে বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকী-ধামকী দিয়ে যাচ্ছে। এই একরামুল হক ডালিম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিপ্তরের সিপাহী পদে দর্শনায় কর্মরত।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ একরামুল হক ডালিমকে আটক করে জিঙ্গাসাবাদ করলে স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারসহ অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দারকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। অভিযোগ উঠেছে অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দারের চাচা শামীম ও চাচাতো ভাই সঞ্চয়কে ভেড়ামারা থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকলে শামীম পুলিশকে জানায়, তার অপর ভাই অর্থাৎ অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দারের আরেক চাচা একরামুল হক ডালিম ও তার স্ত্রী তিতির সাথে অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। একরামুল হক ডালিমকে আটক করে জিঙ্গাসাবাদ করলে অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজের সন্ধান মিলবে এবং ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দার মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সে নিজেও একজন মাদকাসক্ত। পারভেজ আলী সর্দারের চাচা একরামুল হক ডালিম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে চাকরির সুবাধে সেই পরিচয় ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে পূর্ব থেকেই অত্র এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এলাকাবাসী প্রশ্ন রেখে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সিপাহী পদে চাকরী করা একজন ব্যক্তির ক্ষমতার উৎস কোথায়?
অপহরণের শিকার স্কুলছাত্রীর মা হ্যাপি খাতুন জানান, আমি যে কোন মূল্যে আমার একমাত্র সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। পুলিশ প্রশাসনসহ সকল আইনশৃংলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি আমার মেয়েকে আপনারা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
![]()
স্কুলছাত্রীর দাদী জাহানারা খাতুন বলেন, আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি আমার ছেলের একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া সোহাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রকাশ্যে একটা মেয়েকে বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পরেও গত ১ মাসে তাকে উদ্ধার করতে না পারলে আমরা সাধারণ মানুষ কিভাবে আইনের উপর আস্থা রাখবো। সে বেঁচে আছে না মেরে ফেলেছে তাও আমরা জানি না। অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ আলী সর্দারকে আসামী করে মামলা হয়েছে। মামলা নং ৩।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন। এই ঘটনায় একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারসহ অভিযুক্তকে গ্রেফতারে সব ধরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিম উদ্ধার ও অভিযুক্তকে গ্রেফতারে সকল কৌশল প্রয়োগ করছেও বলে তিনি দাবি করেন। অপহরনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও একমাত্র সন্তানের কোন খোজঁ না মেলায় দিশেহারা পরিবার। স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারসহ অভিযুক্তকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তি দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।
