বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এ মাসে দেশের দিগন্তজোড়া মাঠের কাঁচা-পাকা ধানের সাথে দৃঢ় হয় কৃষাণ-কৃষাণীর হৃদয়ের বন্ধন। মাঠের পর মাঠের পাকা সোনালী ধানের চেহারা দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে কৃষক পরিবার। একইসঙ্গে ধানের সোনালী শীষ দেখে আগামীর স্বপ্ন বুনে কৃষাণী ও তার পরিবার নিয়ে। পাকা ধানের গন্ধে মৌ মৌ করে ওঠে কৃষকের আঙ্গিণা। এই পাকা ধানের সুভাস ছড়িয়ে আছে কুষ্টিয়াজুড়েও। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটার উৎসব। ক’দিন আগেও অলস সময় কাটানো কৃষক পরিবারে এখন দম ফেলার সময়টুকুও পাচ্ছেন না।
একদিকে ধানের কাজ, অন্যদিকে নতুন ধানের নতুন চাল, নতুন খাবার তৈরি করতে হয় নিজের ও আত্মীয়দের জন্য। সর্বোপরি যারা কষ্ট করে ধান ফলায়, সেই কৃষকের জন্য হলেও নবান্ন উৎসবে মেতে উঠতে হয়। কৃষকেরা বলছেন, এ বছর মাঠে কৃষকদের খরচ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে পোকামাকড়ের আক্রমণ, রোগবালাই প্রতিরোধ, ও সার-বালাইনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভালো না পেলে অতিরিক্ত ব্যয় আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ কেড়ে নেবে। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, তার রোপা আমন আবাদে এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে ভিন্ন সুর পাওয়া গেছে মশান এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নানের কাছে।
তিনি জানান, ‘গতবার সেচে অনেক খরচ পড়েছিল, এবার প্রকৃতির আশীর্বাদে তেমন খরচ হয়নি। তবে সারের দাম বেশি নেওয়ায় খরচটা বাড়বে। যদিও এবার ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি এবার কিছু সঞ্চয় করতে পারব।’ আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও ন্যায্যমূল্যে সার না পেয়ে বেশি দাম দিয়ে সার কীটনাশক কিনতে হয়েছে কৃষকদের। সার, কীটনাশক ও সেচের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে তারা অনেক কষ্ট করে ধান রোপণ করেন। এই ধান কেটে নিজের খরচ, ধারের টাকা শোধ করবেন নাকি নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাবেন, এই নিয়ে মহাশঙ্কায় আছে কৃষাণ-কৃষাণীরা। প্রতি বছরের মত এবারও আমাদের মাঝে নবান্ন উৎসব এসেছে একটু ভিন্নতা নিয়ে। প্রকৃতিতে কেবল শীত পড়তে শুরু করেছে।
তাই নবান্ন উৎসব নিয়ে গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণীর মাঝে তেমন উচ্ছ্বাস দেখা মিলছে না। যত প্রতিকূল অবস্থা হোক না কেন প্রতি বছরের মতো এবারও নবান্ন উৎসবে মেতে উঠেছে কৃষাণ-কৃষাণীর সাথে এদেশের প্রতিটি সংস্কৃতিমনা মানুষ। নতুন ধান থেকে চাল তৈরি করে তা আবার আটা বানিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পুলি বানানো এবং খাওয়ার ধুম পড়েছে ক’দিন থেকেই। কুয়াশায় আচ্ছন্ন শীতের মিষ্টি রোদের সকালে শহরের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে এরই মধ্যে কুসলি, ভাঁপা, চিতই পিঠা নিয়ে বসেছে মৌসুমি বিক্রেতারা।
কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্য ফলন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, অতিরিক্ত সার ও রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে না পারলে খরচ বাড়বে এবং পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জৈব সার ও জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শওকত হোসেন ভূঁইয়া জানান, কৃষক যেন সহজে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেন, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারে কৃষকবান্ধব মূল্য নির্ধারণ করা গেলে কৃষকেরা লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
