কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সেই অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়িয়েছেন অজ্ঞাতনামা এক মানবিক ব্যক্তি। কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশের মাধ্যমে ওই দম্পতির জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা উপহার পাঠিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার (১৩ মে) দুপুরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ( ডি এস বি) কার্যালয়ে বৃদ্ধ ভ্যানচালক লুৎফর রহমানের হাতে উপহারের টাকা তুলে দেওয়া হয়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ডি এস বি) মো. আতোয়ার রহমান, ডিবি পুলিশের ওসি মাহফুজুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার বিভিন্ন পত্রিকায় একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে বৃদ্ধ দম্পতি শিরোনামে আমার তো ব্যাটাপুত (ছেলে) নাই। একটা ভ্যান ছিল কাটকুট করে চলতাম। সংসারে একটা মেয়ে আছে, তিনবছর আগে স্বামী ছাড়া ( ডিভোর্স) দিছে। একটা নাতি ছোয়াল আছে। ভ্যানটাও চুরি হইয়া গেছে। আমার এখন চলার মতো পরিস্থিতি নাই। এখন আমরা কিভাবে চলব? একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। বৃদ্ধ দম্পতি হলেন – মো. লৎফর রহমান লতিফ (৮৪) ও মোছা. রোকেয়া খাতুন (৫৫)। তারা কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি চুরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী লুৎফর রহমান লতিফের বয়স ৮৪ বছর। এই বয়সে বিশ্রাম নিয়ে দিনযাপনের কথা লতিফের। কিন্তু ছেলে সন্তান না থাকায় ভ্যান চালিয়ে চারজনের সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু গত শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে তাঁর ভ্যারটি চুরি হয়ে যায়। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও ভ্যানের সন্ধান পাননি। পরদিন কুমারখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। জানা গেছে, লতিফের জরাজীর্ণ চারচালা দুই কক্ষ বিশিষ্ট্য টিনশেড ঘরে স্ত্রী, মেয়ে- নাতিসহ চারজনের বসবাস। প্রায় আট বছর আগে বিভিন্ন জনের সহযোগীতায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ভ্যানটি কিনেছিলেন। ভ্যানটি হারিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে আয়। খেয়ে না খেয়ে আত্মমানবেতর জীবন কাটাছে তাদের। নতুন ভ্যান কেনার জন্য প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা দরকার। অপরদিকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ২০ হাজার টাকা পেয়ে ব্যাপক খুশি ভ্যানচালক লুৎফর রহমান লতিফ। তিনি বলেন, হঠাৎ ফোন বাজে উঠল। ফোনে একজন বলল আপনি কুষ্টিয়া ডিবি অফিসে আসুন। ভয়ে ভয়ে দুপুরে ডিবি অফিসে গেলাম। সেখানে দুইজন মিলে একটি খাম দিল। খাম খুলে গুণে দেখি ২০ হাজার টাকা। টাকা গুণতে গুণতেই যেন ভারি মাথাটা অর্ধেক পাতলা হয়ে গেল। স্ত্রী রোকেয়া খাতুন জানান, একজন ২০ হাজার টাকা দিছে। কিন্তু ভ্যানের জন্য আরো ৪০ হাজার টাকা দরকার। ভ্যান হলে আবার টুকটাক করে চলতে পারতাম। তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতা প্রার্থনা করেছেন। জানতে চাইলে কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশের ওসি মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, পত্রিকার অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির খবর দেখে একজন মানবিক ব্যক্তি তাঁর কাছে ২০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার ওই চালককে ডেকে এনে তাঁর হাতে টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে দানকারীর নাম পরিচয় বলা নিষেধ রয়েছে।
