ফুলপরীকে নির্যাতন : হাইকোর্টের নির্দেশনার ১৫ দিনেও উদ্ধার হয়নি সিসিটিভি ফুটেজ
গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। এই ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। তবে হল কর্তৃপক্ষ ফুটেজ সরবরাহ করতে পারেনি। হল প্রশাসন সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আলাদা করে গত ৬ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তবে নির্দেশনার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ফুলপরীকে নির্যাতন : হাইকোর্টের নির্দেশনার ১৫ দিনেও উদ্ধার হয়নি সিসিটিভি ফুটেজ
ক্যাম্পাস সূত্রে, নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতার প্রমাণ পান হাইকোর্টও। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করারও প্রমাণ মেলে। ফলে ১লা মার্চ জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কার, ভুক্তভোগীকে তার পছন্দমতো সিট বরাদ্দ দেয়া, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার ও ভিডিও ধারণকারী মোবাইল উদ্ধারসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
গত ৬ই মার্চ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনার কপি হাতে পায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক গত ৭ই মার্চ সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারের বিষয়ে একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসান- উল-আম্বিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসাথে কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। তবে টেকনিক্যাল সমস্যা থাকায় ফুটেজ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটি।
সূত্র জানায়, সিসিটিভি ক্যামেরায় এক ধরণের বায়োসের ব্যাটারি লাগানো থাকে। যন্ত্রটি বন্ধ রাখার পরও যেন টাইমিংটা ঠিক থাকে এবং সঠিক সময়ের ফুটেজ দেখা যায় সেজন্য এই ব্যাটারি লাগানো হয়। হলের ওই সিসিটিভি ক্যামেরায় লাগানো বায়োসের ব্যাটারি আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে ফুটেজ উদ্ধার করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে কর্তৃপক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও হার্ডডিস্কে সমস্যা থাকায় তারাও ফুটেজ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি।

এ বিষয়ে আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসান-উল-আম্বিয়া বলেন, আমি সাত কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। আগে যেটা বলেছি সেটাই যে, রিপোর্টে আলাদা করে কিছুই থাকবে না। টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে ফুটেজ রিকভার করা সম্ভব হয়নি। ওটা ওখান থেকে রিকোভার করার মতো অবস্থায় আর নেই।
প্রসঙ্গত, ছাত্রী নির্যাতনে জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে গত ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃতরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগ সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। অন্তরা বাদে সকলেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তারা সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই ঘটনায় গত ১লা মার্চ পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এছাড়া তাদের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
