বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে কুষ্টিয়া মডেল থানা, সার্কেল অফিস ও ওসির বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় যে যা পেরেছেন লুটপাট করে নিয়ে গেছেন। অবিশিষ্ট জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে যায়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গত চারদিন ধরে পুলিশ শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। আগুনে পুড়ে অঙ্গার সেই থানা বুধবার ও বৃহস্পতিবার ধরে পরিস্কার করেছে শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার সকালে শিক্ষার্থীদের আহ্বানে ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুল হক চৌধুরী অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত থানা ও তার বাসভবনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবস্থা পরিদর্শন করতে এলে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরআগে গত সোমবার (৫ আগস্ট) বিকাল ৩টার দিকে থানায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া থানায় পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। পরে থানা পুলিশের সদস্যরা থানা ত্যাগ করে চলে যান।
এসময় তারা মোটরসাইকেল, অস্ত্র, বিভিন্ন আসবাবপত্র সহ যে যা পেরেছেন লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় উপস্থিত থাকা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ বলেন, পুলিশ আমাদের পরম বন্ধু। এই ধ্বংসযজ্ঞ কোন কিশোর গ্যাংয়ের কাজ হতে পারে। আবার ১৫ বছরের যে আক্রোশ, তার ক্ষোভের জায়গা থেকেও হতে পারে। তিনি বলেন, এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালালে সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে।
এই জন্য কিন্তু আমরা কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন করি নাই। গত ১৫ বছরে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের কাছে জিম্মিদশায় ছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা কিন্তু বাক স্বাধীনতা পেয়েছে। এরপর আর অন্য কোনো দল এই জিম্মিদশা করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন তৃতীয় কোনো পক্ষ থানা, সার্কেল অফিস ও ওসির বাসভবন ভাঙচুর করেছে এবং পুড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অস্ত্র, গোলাবারুদ, আসবাবপত্রসহ সরকারি নথিপত্র পুড়ে গেছে।
সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যদি পুলিশও মাঠে থাকত তাহলে জনগণের জান মালের নিরাপত্তা থাকত। আমরা পুলিশদের পুনরায় থানায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছি। নতুন করে বরণ করে নিয়েছি। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কুষ্টিয়া মডেল থানা, সার্কেল অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘট মূলত এরপর থেকেই পুলিশ কর্মবিরতি ঘোষণা করে।
বর্তমানে সমস্ত জায়গায় এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় পক্ষ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করেছে। ওসি আরও বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কেরা আমাদের পুনরায় থানা পরিচালনা করে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহবান জানিয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দাবি আদায়ের আন্দোলন চলছে। সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা পেলে আমরা আবারও থানায় ফিরে আসব।
এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সুজন মাহমুদ, মো. সাব্বির হোসেন, মো. তুহিন হোসেন, রাইসুল আহমেদ, সাঈদ আহম্মেদ শ্রেষ্ঠ, রাফিউল ইসলাম রোজ, আব্দুল কাদের মুন্না, মোস্তাফিজুর রহমান, ফরিদ হোসেন, আবু সাঈদ, সাজেদুর রহমান বিপুল, আলমাজ হোসেন মামুন, চাঁদ পরামানিক, আক্তারুজ্জামান চন্টুসহ অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
