নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যাকান্ডের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। দীর্ঘ দুই বছরেও কোন দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই? এতে নিহতের পরিবার-স্বজন ও সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার প্রতি চরমভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। রুবেলের মা ফিরোজা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ে, দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
এখন কেউ আর আমাদের কোন খোঁজ খবর নেই না। আমদের কষ্ট কেউ বোঝেনা, আমরা অনেক বিপদে আছি। পরিবারের উর্পাজনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। এ মাসের ৭ তারিখের দুই বছর পূর্ণ হবে এখন পর্যন্ত রুবেল হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়নি। সাংবাদিক রুবেল হত্যার মামলার ভাগ্যে কি আছে আল্লাহ জানেন। রুবেল হত্যার বিচার আল্লাহ করবে।
কুষ্টিয়ার সাংবাদিকরা বলেন, সাংবাদিক রুবেল হত্যার কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এতে আমরা চরমভাবে অসন্তোষ, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বায়িত্ব আপরাধীদের-খুনিদের আইনের আওতায় আনা, হত্যার রহস্য উন্মোচন করা। কিন্তু রুবেল হত্যাকান্ডের দুই বছর হতে চলেছে তবুও হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন হয়নি। মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে এঘটনায় নূন্যতম সন্তোষজনক কোন তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনাতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। দায়িত্বে অবহেলায় হত্যাকান্ডের রহস্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন, খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা। মামলার বাদী মিজানুর রহমান (মেজর) দৈনিক খবরওয়ালা পত্রিকার প্রতিবেদক কে জানান, রুবেল হত্যাকান্ডের ঘটনা এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। নৌ পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।
রুবেলকে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটির কিছুই জানাতে পারিনি আমরা। মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার প্রতি চরমভাবে অসন্তোষ ও মর্মাহত। মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার জন্য গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বরাবর আবেদনপত্র ডাকযোগে পাঠিয়েছিলাম। আমার ভাতিজা নিহত রুবেলের মামলার কোন গতি বা সুরাহা মেলেনাই। আমি নও পুলিশের ওসি সাথে কথা বলেছি কথা বলে জানতে পারি সঠিক কোন তথ্য খুঁজে না পাওয়াই প্রায় মামলাটি বাতিলের দিকে সেই ক্ষেত্রে কয়েক দিন আগে তারা থানায় এসেছিল আমি তখন কুষ্টিয়া সদর থানার বসে রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মোঃ গোলাম মাওলা ভাইকে সাথে নিয়ে নো পুলিশের ওসি এমদাদুল এর সাথে কথা বলেছি মামলাটি যাতে বাতিল না হয় সেই ক্ষেত্রে যা যা করার আমি সেই বিষয়ে তাদের সাথে সব প্রকার কথা বলেছি।
তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কোন খোজ খবরও নেই নাই এবং তাদের সাথে আমাদের আর কোন কথাও হয়নি। তবে আমাদের দাবি মামলাটি বাতিলের দিকে না দিয়ে সঠিক তদন্ত করে মামলাটির একটি সঠিক গতি করে আসামি বা আসামিদের আইনের আওতায় আনা হোক।
সে সময় সাংবাদিক রুবেল হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার কার্যালয় ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেলেও একটুও লাভ হয়নি প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসে আবার চুপ চাপ। ২০২২ সালের ১৫ জুলাই দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রুবেল হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কাজী সোহান শরিফ (৪০) ও খন্দকার আশিকুর রহমান জুয়েল (৩৫) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের অভিযানিক দল।
কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায় গোলাম রহমান সড়কের মৃত আবদুল হামিদের ছেলে কাজী সোহান শরীফ (৪৪) এবং চর কুঠিপাড়া এলাকার মৃত খন্দকার হারুন অর রশিদের ছেলে খন্দকার আশিকুর রহমান ওরফে জুয়েলকে (৪০) গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব। অবশ্য এক মাস পর তারা জামিনে বের হন। কাজী সোহান শরীফ একসময় স্থানীয় একটি পত্রিকায় কাজ করতেন। বর্তমানে এনজিও কর্মী। আশিকুর রহমান কুষ্টিয়া পৌর বাজারে মাছের আড়তে কাজ করেন।
একই বছরের ২১ জুলাই রাত ৮টা ৫০মিনিটের দিকে রাজারহাট মোড় হতে রুবেল হত্যার ঘটনায় জড়িত ইমনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তার ইমরান শেখ ওরফে ইমন (৩২) কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার স্যার ইকবাল রোডের বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে। পরবর্তীতে রুবেলের সাথে তার সম্পৃক্ত কনো সত্যতা না পাওয়াতে কয়েক মাস পর আদালত তাকে জামিন দিয়ে দেন।
২২ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম দাবি করেছিলেন, পেশাগত কারণে সাংবাদিক হাসিবুর রহমান খুন হননি। তবে তদন্তের স্বার্থের কথা বলে তিনি এ হত্যাকান্ডের কারণ বিষয়ে আর কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, রুবেল হত্যাকান্ডের মামলাটি প্রথম থেকে আমিই তদন্ত করছিলাম। হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি। তবে হত্যা মামলার তিন আসামি গ্রেফতার হয়েছিলো।
মামলাটি বর্তমান অবস্থা জানিনা। গত বছরের জানুয়ারি মাসে বদলি হয়ে খুলনায় চলে এসেছি। এমদাদুল হক নামের আরেক কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করছে। এবিষয়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় লক্ষ্মীকুন্ডী নৌ থানার পরিদর্শক ও মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, রুবেল হত্যাকান্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে পারিনি এখনো। তবে আমরা চেষ্টা করছি হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করতে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের ৫ দিন পরে গত বছরের ৭ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কুমারখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেবাড়িয়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়া ব্রিজের (নির্মাণাধীন) নিচে গড়াই নদী থেকে হাসিবুর রহমান রুবেলের (৩১) অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন ৮ জুলাই ময়নাতদন্ত শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর গোরস্থানে জানাজা শেষে নিহত সাংবাদিক রুবেলের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এর আগে ৩ জুলাই রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে তার পত্রিকা অফিসে অবস্থান করছিলেন। এ
সময় মোবাইলে একটি কল এলে তিনি অফিস পিয়নকে ‘বাইরে থেকে আসছি’ বলে বের হন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরে নিখোঁজের ৫ দিন পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গত ৮ জুলাই রাতে কুমারখালী থানায় রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান মেজর বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। নিহত রুবেল কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লক এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।
