নিজ সংবাদ ।। এবার খোদ সরকার বিরোধী ও প্রকাশ্যে সরকারের কটাক্ষ করে বেড়ানো ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অবৈধ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ও পরে নানা অনিয়মে দোষী সাব্যস্ত নওয়াব আলী খানকে অতিরিক্ত রেজিস্টরের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ আসকারী । এক্ত্রেষে তিনি পুরোপুরি নিয়ম ভেঙ্গে প্রচন্ড অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । আর এটা তিনি চুপিচুপি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার অফিস সূত্রে জানা গেছে গত ২৭ অক্টোবর চরম গোপনীয়তা র¶া করে উপাচার্য নওয়াব আলী খানকে উক্ত পদে নিয়োগ দেন । আর নওয়াব আলী উক্ত পদে যোগদান করেন ঐ একই দিন রাত ৮ টায় । পরের দিন বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ক্যাম্পাসের শুরু হয়েছে নানা আলোচনা । উঠেছে সমালোচনার ঝড় । বিষয়টি নিয়ে করা হচ্ছে নানা অভিযোগ, বলা হচ্ছে উপাচার্য বিধি লংঘন করেছেন, বলা হচ্ছে এটা চরমভাবে একটি নীতি লক্সঘন । যা কোনমতেই করা উচিত হয়নি বলে মনে করেন অনেকে ।
বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী মনোভাবাপন্ন অসংখ্য যোগ্য ও সিনিয়র কর্মকর্তা থাকতে কেন উপাচার্য একজন আওয়ামী বিরোধী ও প্রকাশ্যে সরকারের কটাক্ষ করে বেড়ানো ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও যিনি পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ নিয়োগের অভিযোগে অভিযুক্ত, যার বিরুদ্ধে ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে সেই তাকে কেন ইবিতে অতিরিক্ত রেজিস্টার এর মত এত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে তা কেউ বুঝতে পারছেন না । অনেকেই বলেছেন এটাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সব নিয়োগের মতই বিশেষ লেনদেনের মাধ্যমে করা হয়েছে বিধায় সম্ভব হয়েছে ।
সূত্রে পাওয়া তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৭ এপ্রিল ২০১৩ তারিখের শিম/শাঃ১৯/প.বি.-৯/২০০৩/১৪৫ নম্বর পত্রের মাধ্যমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাখিলকৃত প্রতিবেদন এবং একাধিক জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত দূর্নীতি, সস্বজনপ্রীতি ও অনিয়েমের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ সমূহ সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয় ।

এ লক্ষে ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক ০৩-০৯-২০০৩ তারিখের স্মারক নম্বর ইউজিসি/প্রশা/পাবঃবিশ্ব/৪০২ (পার্ট-৪) ১২/৭১৭৮ দ্বারা একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে । কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ মহব্বত খান, সদস্য ছিলেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ডক্টর আবুল হাশেম এবং সদস্য সচিব ছিলেন ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক অতিরিক্ত পরিচালক ফেরদৌস জামান । কমিটিকে তদন্তের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন নথি, গোপন দলিল পত্রাদি এবং রিজেন্ট বোর্ড ও অন্যান্য পর্ষদে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত/প্রসিডিংস ও আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র পরীক্ষ নিরীক্ষা করা এবং একই প্রয়োজনে কমিটি যে কাউকে যে কোন জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা অর্পণ করা হয় ।
কমিটি তদন্তে নেমে সরেজমিন পরিদর্শন, সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক দাখিলকৃত ক্রতিবেদন পর্যালোচনা, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা, সার্কুলার জারি সহ অভিযুক্তের বক্তব্য ও অভিযোগকারীদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগসহ নানাভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করে । তদন্তকালে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ও বক্তব্য ধারণ করা হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শামসুদ্দিন, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুনর রশিদ, অভিযুক্ত রেজিস্টার নওয়াব আলী খান, প্রফেসর ড. মোহসিন হোসেন খান, প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান, প্রফেসর মোঃ হামিদুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সমš^য় পরিষদের সভাপতি লুৎফর রহমান সহ ৩৯ জনের সাক্ষাৎ গ্রহণ করেন ।
তদন্ত শেষে দেওয়া বিশাল প্রতিবেদনে কর্মকর্তা নিয়োাগে অনিয়ম অনুচ্ছেদে আলোচ্য নওয়াব আলী খানকে নিয়ে ভয়াবহ এক পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণাদি উত্থাপন করা হয় । তদন্তে বলা হয় উপাচার্য প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন তার আমলে বিশাল পরিমাণ ১১২ জন কর্মকর্তাই (শিক্ষক কর্মচারী বাদে) নিয়োগ দেন । যার মধ্যে ৮২টি পদেরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা ইউজিসি’র অনুমোদন ছিল না । যে পদে (কর্মকর্তা) নিয়োগ পাওয়ার মত শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা অভিজ্ঞতা ছিল না, সেসব পদে তিনি শিক্ষকদের ন্যায় কর্মকর্তাদেরকেও প্রথমে চুক্তিভিত্তিক কিংবা খন্ডকালীন পদে নিয়োগ দিতেন । তারপর সুযোগ মত তাদেরকে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়মিত করতেন । এই সংবাদের আলোচ্য নবাব আলী খান একইভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা ।
বিঃ দ্রঃ এই সংবাদটি ৬ই নভেম্বর ২০১৯ সালে ”দৈনিক আজকের আলো” পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের অংশ বিশেষ
