সন্ত্রাসী বেল্লাল মন্ডলমাদক সম্রাট থেকে নদীপথের গডফাদার - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

সন্ত্রাসী বেল্লাল মন্ডলমাদক সম্রাট থেকে নদীপথের গডফাদার

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ২, ২০২৫

রাজশাহী বাঘা সহ চার জেলার আতঙ্ক 

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এলাকার মানুষের কাছে মূর্তিমান আতংকের নাম মাদক সম্রাট, চার জেলার ডাকাতি চক্রের অন্যতম সদস্য, নদীপথে অস্ত্র ব্যাবসা, জমিদস্যু, জবরদখলকারী হত্যাকারী নদীপথের ত্রাস বেল্লাল মন্ডল। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চল খানপুর গ্রামের মো. সামসেদ মন্ডলের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র ব্যবসা, মাদক, হুন্ডি ও কৃষকদের জমি জোরপুর্বক দখলসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত, সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের একাধিক মামলারও আসামি। এছাড়া একাধিক মামলা পলাতক আসামি।

পতিত সরকারে সাবেক এমপি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) শাহরিয়ার আলমের ছত্রছায়ায় একটি শক্তিশালী অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের হলেও তার আধিপাত্য এখনও ধরে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন খানপুর গ্রামে বসবাসকারীরা। বেল্লাল মন্ডলের নামে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট, নাটোরের লালপুর এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও ভেড়ামারা থানায় অস্ত্র, মাদক হত্যা, হত্যচেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। জমি দখল ও কৃষকদের শোষণ বেল্লাল পদ্মা নদীর তীরে জেগে ওঠা হাজার হাজার বিঘা খাস জমি এবং প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা খড় জোরপূর্বক বিক্রি করেন।

প্রকৃত জমির মালিকদের দমন করে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজের নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন। যারা তার শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়,তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। অঞ্চলজুড়ে তার অবৈধ নিয়ন্ত্রণে শত শত গরু-মহিষের বাতান রয়েছে। এসব গবাদি পশু চরাতে কৃষকদের কাছ থেকেও জোরপূর্বক টাকা আদায় করে। বেল্লালের অপরাধ সাম্রাজ্যের আরেকটি বড় দিক হলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক আমদানি।

প্রানের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন সামাজিক ব্যাক্তি বলেন, বিল্লাল মন্ডলের কাছে এসব পণ্য আনা অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি একটি সুসংগঠিত মাদক ব্যবসার চক্র পরিচালনা করছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার বেল্লাল মন্ডল একসময় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও স্থানীয় নেতাদের সাথে আঁতাত করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমের অভিযোগে জড়িত ছিলেন বলে এলাকাবাসীর মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে।

বর্তমানে তিনি বিএনপির নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেছেন, যে বাহিনীর সক্রিয় সদস্য কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর, চিলমারী, মরিচা সহ পদ্মা নদীর চতুর্পাশের চার জেলাতে বিল্লাল বাহিনীর সিন্ডিকেট রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিবাদে ভয় আর নীরবতা অঞ্চলের সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পায়। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন এবং জীবননাশের হুমকি সহ প্রাননাশ। বেল্লাল মন্ডলের অপরাধ কার্যক্রমে পুরো এলাকা আতঙ্কিত। সদ্য কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও রাজশাহী বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই বাহিনীর যে তিনজন নিহত হয়েছে, এই ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী বিল্লাল মন্ডল বাহিনীর পূর্বপ্লান।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতা বেল্লালের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক ও অস্ত্র পাচারের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ ধরনের অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের বাঘা চারঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার খালেক হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিল্লাল মন্ডলের নামে ওয়ারেন্ট থাকলে ও লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে, মাদক,অস্ত্র ব্যবসায়ী, জমিদস্যু বা বাহিনীরা যত বড় শক্তিশালী বা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকুকনা কেন কোন ছাড় দেওয়া হবেনা। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া বেল্লাল মন্ডলের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে কাজ শুরু করছে পুলিশ। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।