নিজ সংবাদ ॥ দু দুবার ফিল্মি স্টাইলে সন্ত্রাসী কায়দায় কেন্দ্র দখল করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এজাজুল হাকিম। এজাজুল হাকিম কুষ্টিয়া-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতার খুবই ঘনিষ্ঠজন। তিনি পৌরসভার কুমারগাড়া এলাকার মৃত. আব্দুল হাকিম প্রামানিকের ছেলে। পদত্যাগ করে দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কাউন্সিলর এজাজুল হাকিমের উত্থান চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা।
দু দুবার কেন্দ্র দখল করে নিজ কাউন্সিলর হয়ে নিজ উন্নয়ন বেশ করছেন তিনি। নিজের উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে চাঁদাবাজি, ভুমি দখল, টেন্ডারবাজি, কন্টাকবাজি, মামলাবাজি কোনটাই করতে বাদ রাখেননি তিনি। এজাজের নির্বাচনী এলাকার খোদ বাসিন্দাদের মুখেই এসব অপকর্মের তথ্য মিলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার ২০ নং ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দখল করে কাউন্সিলর হওয়ার পাশাপাশি পৌরসভার ২০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও হয়েছেন তিনি।
তার আপন ফুফাতো ভাই ইশতিয়াজ হান্নানকে বানিয়েছেন একই ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি। দুইবার রাতের আঁধারে ভোট কেটে এবং সন্ত্রাসী কায়দায় কেন্দ্র দখল করে কাউন্সিলর হয়েছেন এজাজুল হাকিম। তার নেতৃত্বে গঠিত সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমারগাড়া কেন্দ্র দখল করে ও অবৈধভাবে ভোট কেটে কুমারগাড়া কেন্দ্রে মাহাবুবউল আলম হানিফকে বিজয়ী করেছেন তিনি।
হানিফকে বিজয়ী করার পাশাপাশি একইভাবে তার চাচাতো ভাই কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতাকেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুমারগাড়া কেন্দ্রে বিজয়ী করেন তিনি। একাধিক বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কাউন্সিলর এজাজ ও তার ভাই তাইজুল, মঞ্জিল হোসেন বাবলু, ইশতিয়াজ হান্নান এরা সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা কুমারগাড়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ব্যাপক চাঁদাবাজি এবং ভুমি দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।
এজাজ এখনও আতাউর রহমান আতা’র ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ফ্যাক্টরির ব্যবসায়ীক পার্টনার এবং বিএটি’র খাজানগর ডিপোর সমস্ত কন্টাক্ট এজাজ পরিচালনা করছে। অধিকাংশ কন্টাক্ট আতা নিজ নামে না করে এজাজের নামে করায়। যা এখনও আতা চালাচ্ছে এজাজের নামে। এদিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর টিপু সুলতান ইব্রাহিম আকাশ (২৩) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত আকাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছিলেন কাউন্সিলর এজাজুল হাকিম। মামলার বিবরণে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে গ্রেপ্তারকৃত আকাশ তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে “অনলাইন বিজনেস প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টতা আছে” উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তিমূলক কথা বলেন। বিষয়টি কাউন্সিলর এজাজের নজরে আসে। এরপর তিনি অভিযোগ আনেন- ” ঐ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় এলাকায় লোকজনের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
তার (বাদী এজাজুল হাকিমের) নজরে এলে রাষ্ট্রের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন করাসহ অত্র এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কথা বলে মামলা দায়ের করা হয়।” গত বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে আকাশকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। আকাশ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমারগাড়া পরামাণিকপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল হাকিম প্রামাণিকের ছেলে। সেসময় ঘটনাটি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর “কুষ্টিয়ায় গাছ চুরির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ” শিরোনামে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সংবাদে লেখা হয়- কুষ্টিয়া শহরতলীর কুমারগাড়া এলাকায় প্রভাবশালী দূর্বৃত্তচক্র কর্তৃক জিকে সেচ খালের দুই পাড়ের প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক ফলজ ও বনজ গাছ চুরি করে নিধনের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারী গাছ চুরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ২০নং পৌর কাউন্সিলর ও সেচ-সম্প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তার ইন্ধনে সদর উপজেলার বড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক ও কুমারগাড়া গ্রামের সেলিম হোসেন অবৈধভাবে সরকারী এসব গাছ চুরির সাথে জড়িত।
এবিষয়ে শত শত সরকারী গাছ চুরির অভিযোগে দুইজনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়ার এক মাস পার হলেও কোন মামলা রেকর্ড বা জড়িত কাউকে গ্রেফতার করেনি কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। এতে স্থানীয়রা সহ সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ ও চরম হতাশ। সেসময় পুলিশ বলেছিল তারা অভিযোগটি তদন্ত করে দেখছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তৎকালীন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অভিযোগটি দায়ের করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৪ দফা দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন ভেস্তে দিতেও কাউন্সিলর এজাজুল হাকিমের চরম অবদান রয়েছে। তার এলাকায় আন্দোলকারীদের তালিকা করে তাদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে হুমকি দিতেন তিনি।
এছাড়াও আন্দোলনে সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে সে ও তার ক্যাডার বাহিনী একত্রিত হয়ে ছাত্রজনতার উপরে ঝাপিয়ে পড়েছিল। এতকিছুর পরও এতসব অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই কাউন্সিলর এজাজুল হাকিমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
