নানা সংকটে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে কুমারখালীর গামছা শিল্প - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

নানা সংকটে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে কুমারখালীর গামছা শিল্প

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: অক্টোবর ২৭, ২০২৩
নানা সংকটে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে কুমারখালীর গামছা শিল্প

শহরের বুক চিরে প্রবাহিত গড়াই নদী পাশে অবস্থিত কুমারখালী উপজেলা এলঙ্গি পাড়া এক সময় এলাকাজুড়ে বেশ কিছু পরিবার গামছা তৈরির কাজ করতো । স্থানীয় ভাষায় এদের কারিগর বলা হতো। সুতো কিনে বিভিন্ন রং মিশিয়ে নিজেদের তাঁতে সুনিপুণ হাতে গামছা  তৈরি হত এই তাঁত পল্লিতে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হত সে সময়। আজ সেদিন কেবলই হারানো দিন। তবে ৫/৬টি পরিবার এখনও গামছা তৈরি করে কোনোভাবে পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। কিন্তু নানা সঙ্কটেও তারাও হারিয়ে যেতে বসেছেন এই শিল্পটি।

নানা সংকটে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে কুমারখালীর গামছা শিল্প

নানা সংকটে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে কুমারখালীর গামছা শিল্প

নানা সংকটে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে কুমারখালীর গামছা শিল্প

কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিকতার ছোঁয়া ও পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কুমারখালীর ঐহিত্যবাহী তাঁতের গামছা শিল্প। এক সময়  যে তাঁত পল্লি তাঁতের খটখট শব্দে রাত-দিন মুখরিত ছিল, আজ সেখানে শোনশান নীরবতা। তবু বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে কোনোমতে টিকে আছে কয়েকটি পরিবার।

নানা প্রতিকূলতার কারণে এককালের প্রসিদ্ধ গামছাশিল্পটি আজ বিলুপ্তি ঘটছে যাচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি তাঁত আছে মাত্র, এই শিল্পের সাথে জড়িত শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তবে উপজেলার প্রায় শতাধিক পরিবার এখনো গামছা তৈরি করে কোনোভাবে পুরানো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

google news

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

এক সময় কুমারখালী, খোকসা, , পাংশা, উপজেলায় প্রায় ৮০ হাজারেরও অধিক গামছা তাঁতি ছিল। এর মধ্যে খটখটি তাঁত ১৪ হাজার, হস্তচালিত পিটলং তাঁত ৪৪ হাজার ও বিদু্যৎচালিত তাঁত ২০ হাজার। প্রতি বছর ২৬০ কোটি টাকা মূল্যের কাপড় তৈরি হতো এ জেলায়। ২ কোটি ৮৮ লাখ পিস লুঙ্গি, ১৫ লাখ পিস বেড কভার, ৭২ লাখ পিস গামছা তোয়ালে উৎপাদন হতো। এক সময় এ জেলায় বস্ত্রশিল্পের বার্ষিক আয় ছিল ৩শ কোটি টাকার ওপরে। দেশের মোটা কাপড়ের চাহিদার ৬৩ ভাগ পূরণ করতেন কুষ্টিয়ার তাঁতিরা।

১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ তাঁত কাপড়ের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে এ চাহিদা কমে ৩৫ ভাগে নেমে এসেছে। সব কিছুর দাম বাড়লেও আশানুরূপ তাঁতবস্ত্রের কোনো দাম না বাড়ায় কুষ্টিয়ার ১ লাখ ১৪ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৫০ হাজার তাঁতশ্রমিক পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখনো পুরানো পেশা হিসেবে এ পেশায় টিকে আছেন কয়েক হাজার তাঁতি। কুষ্টিয়া তাঁত বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় ১৫ হাজার পাওয়ার লুম ও ২ হাজার হ্যান্ডলুমে ১ লাখ ৪০ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এ বিষয়ে গফুর কারিগর জানান, উপজেলাজুড়ে তাঁত পলিস্নগুলো তাঁতের খটখট শব্দে রাত-দিন মুখরিত থাকত, আজ সেখানে সুনসান নীরবতা। তবু বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে কোনোমতে টিকে আছে কয়েকটি পরিবার।

গামছাশিল্পের শ্রমিক ওহাব জানান, উপজেলাজুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি এলাকায় তাঁতের গামছা তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিকতার ছোঁয়া ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কুমারখালী ঐহিত্যবাহী তাঁতের গামছাশিল্প।

কুমারখালী তেবাবাড়িয়া গ্ৰামের জাফর শেখ বলেন। এক সময় এই গামছা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। তার অনুপস্থিতিতে ছেলে খোকন শেখ অনেক কষ্টে তাদের পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছে।  বড় ছেলে জহুরুল বাবার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুটি তাঁতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

কুমারখালী এলাঙ্গী পাড়ার গামছা কারিগর আতিয়ার রহমান, বলেন এখন এই শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার মধ্যে কিছু পরিবার হাত তাঁতের গামছা তৈরি করে। সুতা, রং সহ গামছা তৈরির কাঁচামালের সব জিনিসপত্র দাম বেশি। সেই তুলনায় গামছার দাম বাড়েনি আমি এই কাজ আর করতে চাচ্ছি না সব বন্ধ হয়ে যাবে আস্তে -আস্তে।

কুমারখালী মার্চেন্ট এসোসিয়েশন সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কুমারখালী তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য প্রায় দেড় শ’বছরের। তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অবস্থা ভালো না। এই শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কেউ নজর দিচ্ছে না সুতা, রং, সহ সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সেই তুলনায় বাড়েনি গামছার দাম। এই শিল্প শেষ। আর কেউ এই তাঁত করবে বলে মনে হয় না।

কুমারখালী তাঁত বোর্ডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান জানান , এখানে প্রায় পাঁচ হাজার তাঁতি ছিল।সেটা এখন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে প্রান্তিক তাঁতিরা সঠিক দাম না পেয়ে, তাঁতির সংখ্যা দিন দিন কমছে।নতুন একটি প্রকল্প প্রোসেসিং, প্রিন্টিং ও ডায়িংয়ের চালু হয়েছে যেটা সম্পুর্ণ চালু হলে তাঁতিদের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আশা করি।

আরও পড়ুন: